পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৩৯৫

আমি নিজের মনোভাব গোপন করছি না, সর্বপ্রযত্নে তোমাকে বিজয়ী ও সুখী করতে ইচ্ছা করি। কিন্তু পাণ্ডবদের সহায় হ’য়ে যাঁরা ক্রোধবিষ উদ্‌গার করছেন তাঁরা সকলেই মহারথ অস্ত্রবিশারদ ও বলগর্বিত, তুমি পূর্বে তাঁদের সঙ্গে শত্রুতাও করেছিলে। তোমার জন্য আমি প্রাণপণে যুদ্ধ করব, নিজের জীবনরক্ষার চেষ্টা করব না। পাণ্ডবগণ ইন্দ্রের তুল্য বিক্রমশালী, বাসুদেব তাঁদের সহায়, তাঁরা দেবগণেরও অজেয়। তথাপি আমি তোমার কথা রাখব, হয় আমি পাণ্ডবদের জয় করব নতুবা তাঁরা আমাকে জয় করবেন।

 ভীষ্ম দুর্যোধনকে বিশল্যকরণী ওষধি দিলেন, তার প্রয়োগে দুর্যোধন সুস্থ হলেন। পরদিন ভীষ্ম মণ্ডল ব্যূহ এবং যধিষ্ঠির বজ্র ব্যূহ রচনা করলেন। যুদ্ধকালে অর্জুনের বিক্রম দেখে দুর্যোধন স্বপক্ষের রাজাদের বললেন, শান্তনুপুত্র ভীষ্ম জীবনের মায়া ত্যাগ করে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, আপনারা সকলে ভীষ্মকে রক্ষা করুন। রাজারা তখনই সসৈন্যে ভীষ্মের কাছে গেলেন।

 দ্রোণ বিরাট পরস্পরকে শরাঘাত করতে লাগলেন। বিরাটের অশ্ব ও সারথি বিনষ্ট হ’লে তিনি তাঁর পুত্র শঙ্খের রথে উঠলেন। দ্রোণ এক আশীবিষতুল্য বাণ নিক্ষেপ করলেন, তার আঘাতে শঙ্খ নিহত হয়ে প’ড়ে গেলেন। তখন ভীত বিরাট কালান্তক যমতুল্য দ্রোণকে ত্যাগ করে চ’লে গেলেন।

 সাত্যকির ঐন্দ্র অস্ত্রে রাক্ষস অলম্বুষ রণস্থল থেকে বিতাড়িত হ’ল। ধৃষ্টদ্যুম্নের শরাঘাতে দুর্যোধনের রথের অশ্ব বিনষ্ট হ’ল, শকুনি তাঁকে নিজের রথে তুলে নিলেন। অবন্তিদেশীয় বিন্দ ও অনুবিন্দ অর্জুনপুত্র ইরাবানের[১] সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। অনুবিন্দের চার অশ্ব নিহত হ’ল, তিনি বিন্দের রথে উঠলেন। ইরাবান বিন্দের সারথিকে বধ করলেন, তখন বিন্দের অশ্বসকল উদ্ভ্রান্ত হয়ে রথ নিয়ে চার দিকে ছুটতে লাগল। ভগদত্তের সহিত যুদ্ধে ঘটোৎকচ পরাস্ত হয়ে পালিয়ে গেলেন। শল্য ও তাঁর দুই ভাগিনেয় নকুল-সহদেব পরম প্রীতি সহকারে যুদ্ধ করতে লাগলেন। শল্য সহাস্যে বাণ দ্বারা নকুলের রথধ্বজ ও ধনু ছিন্ন এবং সারথি ও অশ্ব নিপাতিত করলেন, নকুল সহদেবের রথে উঠলেন। তখন সহদেব মহাবেগে এক শর নিক্ষেপ ক’রে মাতুলের দেহ ভেদ করলেন, শল্য অচেতন হয়ে রথমধ্যে পড়ে গেলেন, তাঁর সারথি তাঁকে নিয়ে রণস্থল থেকে চলে গেল।

  1. মহাভারতে ইরাবানের জননীর নাম দেওয়া নেই। বিষ্ণুপুরাণে আছে, ইনিই উলূপী। আদিপর্ব ৩৯-পরিচ্ছেদ ও ভীষ্মপর্ব ১৪-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।