পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৪০১

১৬। ভীষ্ম-সকাশে যুধিষ্ঠিরাদি

 শিবিরে এসে যুধিষ্ঠির তাঁর মিত্রদের সঙ্গে মন্ত্রণা করতে লাগলেন। তিনি কৃষ্ণকে বললেন, হস্তী যেমন নলবন মর্দন করে সেইরূপ ভীষ্ম আমাদের সৈন্য মর্দন করছেন। আমি বুদ্ধির দোষে ভীষ্মের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে শোকসাগরে নিমগ্ন হয়েছি। কৃষ্ণ, আমার বনে যাওয়াই ভাল, যুদ্ধে আর রুচি নেই, ভীষ্ম প্রতিদিনই আমাদের হনন করছেন। যে জীবনকে অতি প্রিয় মনে করি তা আজ দুর্লভ হয়েছে, এখন অবশিষ্ট জীবন ধর্মাচরণে যাপন করব। মাধব, যদি আমাদের প্রতি তোমার অনুগ্রহ থাকে তবে এমন উপদেশ দাও যাতে আমার স্বধর্মের বিরোধ না হয়।

 কৃষ্ণ বললেন, ধর্মপুত্র, বিষণ্ণ হবেন না, আপনার ভ্রাতারা শত্রুহন্তা দুর্জয় বীর। অর্জুন যদি ভীষ্মবধে অনিচ্ছুক হন তবে আপনি আমাকে নিযুক্ত করুন, আমি ভীষ্মকে যুদ্ধে আহ্বান ক’রে দুর্যোধনাদির সমক্ষেই তাঁকে বধ করব। যে পাণ্ডবদের শত্রু সে আমারও শত্রু, আপনার ও আমার একই ইষ্ট। আপনার ভ্রাতা অর্জুন আমার সখা সম্বন্ধী ও শিষ্য, তাঁর জন্য আমি নিজ দেহের মাংসও কেটে দিতে পারি। অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে ভীষ্মকে নিপাতিত করবেন। এখন তিনি সেই কথা রাখুন, অথবা আমাকেই ভার দিন। ভীষ্ম বিপরীত পক্ষে যোগ দিয়েছেন, নিজের কর্তব্য বুঝছেন না, তাঁর বল ও জীবন শেষ হয়ে এসেছে।

 যুধিষ্ঠির বললেন, গোবিন্দ, তুমি আমাদের রক্ষক থাকলে আমরা ভীষ্মকে কেন, ইন্দ্রকেও জয় করতে পারি। কিন্তু স্বার্থের জন্য তোমাকে মিথ্যাবাদী করতে পারি না, তুমি যুদ্ধ না করেই আমাদের সাহায্য কর। ভীষ্ম আমাকে বলেছিলেন যে দুর্যোধনের পক্ষে যুদ্ধ করলেও তিনি আমার হিতের জন্য মন্ত্রণা দেবেন। অতএব আমরা সকলে মিলে তাঁর কাছে যাব এবং তাঁর বধের উপায় জেনে নেব। তিনি নিশ্চয় আমাদের হিতকর সত্য বাক্য বলবেন, আমাদের যাতে জয় হয় এমন মন্ত্রণা দেবেন। বালক ও পিতৃহীন অবস্থায় তিনিই আমাদের বর্ধিত করেছিলেন। মাধব, সেই বৃদ্ধ প্রিয় পিতামহকে আমি হত্যা করতে চাচ্ছি —ক্ষত্রজীবিকায় ধিক!

 পাণ্ডবগণ ও কৃষ্ণ কবচ ও অস্ত্র ত্যাগ ক’রে ভীষ্মের কাছে গিয়ে নতমস্তকে প্রণাম করলেন। সাদরে স্বাগত জানিয়ে ভীষ্ম বললেন, বৎসগণ, তোমাদের কি প্রিয়কার্য করব? নিঃশঙ্ক হয়ে বল, যদি অতি দুষ্কর কর্ম হয় তাও আমি করব। ভীষ্ম প্রীতিপূর্বক বার বার এইরূপ বললে যুধিষ্ঠির দীনমনে বললেন, সর্বজ্ঞ,