পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
মহাভারত

বিনতা আকাশপথে সমূদ্রের পরপারে গেলেন। উচ্চৈঃশ্রবার পুচ্ছে কৃষ্ণবর্ণ লোম দেখে বিনতা বিষণ্ণ হলেন এবং কদ্রু তাঁকে দাসীত্বে নিযুক্ত করলেন।

 এই সময়ে বিনতার দ্বিতীয় ডিম্ব বিদীর্ণ ক’রে মহাবল গরুড় বহির্গত হলেন এবং অগ্নিরাশির ন্যায় তেজোময় বিশাল দেহ ধারণ ক’রে আকাশে উঠে গর্জন করতে লাগলেন। তারপর তিনি সমুদ্রের পরপারে মাতার নিকট গেলেন। কদ্রু বিনতাকে বললেন, সমুদ্রের মধ্যে এক সুরম্য নাগালয় আছে, সেখানে আমাকে নিয়ে চল। বিনতা কদ্রুকে এবং গরুড় তাঁর বৈমাত্র ভ্রাতা সর্পগণকে বহন ক’রে নিয়ে চললেন। সূর্যতাপে পুত্ররা কষ্ট পাচ্ছে দেখে কদ্রু ইন্দ্রের স্তব করলেন, ইন্দ্রের আদেশে মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হ’ল। সর্প সকল হৃষ্ট হয়ে গরুড়ের পিঠে চ’ড়ে এক রমণীয় দ্বীপে এল। তারা গরুড়কে বললে, আমাদের অন্য এক দ্বীপে নিয়ে চল যেখানে নির্মল জল আছে। গরুড় বিনতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এদের আজ্ঞানসারে আমাকে চলতে হবে কেন? বিনতা জানালেন যে কদ্রু কপট উপায়ে তাঁকে পণে পরাজিত ক’রে দাসীত্বে নিযুক্ত করেছেন। গরুড় দুঃখিত হয়ে সর্পদের জিজ্ঞাসা করলেন, কি করলে আমরা দাসত্ব থেকে মুক্ত হ’তে পারি? সর্পরা বললে, যদি নিজ বীর্যবলে অমৃত আনতে পার তবে মুক্তি পাবে।

 গরুড় বিনতাকে বললেন, আমি অমৃত আনতে যাচ্ছি, পথে কি খাব? বিনতা বললেন, সমুদ্রের এক প্রান্তে বহু সহস্র নিষাদ বাস করে, তুমি সেই নির্দয় দুরাত্মাদের খেয়ো কিন্তু ব্রাহ্মণদের কখনও হিংসা ক’রো না। গরুড় আকাশমার্গে যাত্রা ক’রে নিষাদালয়ে উপস্থিত হলেন এবং মুখব্যাদান ক’রে নিষাদগণকে গ্রাস করতে লাগলেন। এক ব্রাহ্মণ তাঁর পত্নীর সঙ্গে গরুড়ের কণ্ঠে প্রবেশ করেছিলেন। দীপ্ত অঙ্গারের ন্যায় দাহ বোধ হওয়ায় গরুড় বললেন, দ্বিজোত্তম, তুমি শীঘ্র নির্গত হও, ব্রাহ্মণ পাপী হ’লেও আমার ভক্ষ্য নয়। ব্রাহ্মণ বললেন, তবে আমার নিষাদী ভার্যাকেও ছেড়ে দাও। গরুড় বললেন, আপনি তাঁকে নিয়ে শীঘ্র বেরিয়ে আসুন, যেন আমার জঠরানলে জীর্ণ না হন। ব্রাহ্মণ সস্ত্রীক নির্গত হয়ে গরুড়কে আশীর্বাদ ক’রে প্রস্থান করলেন।

 তারপর গরুড় তাঁর পিতা মহর্ষি কশ্যপের কাছে গেলেন। কশ্যপ কুশল প্রশ্ন করলে গরুড় বললেন, আমি মাতার দাসীত্ব মোচনের জন্য অমৃত আনতে যাচ্ছি, কিন্তু আমি প্রচুর খাদ্য পাই না, আপনি আমার ক্ষৎপিপাসানিবৃত্তির উপায় বলুন।

 কশ্যপ বললেন, বিভাবসু নামে এক কোপনস্বভাব মহর্ষি ছিলেন, তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা সুপ্রতীক ধনবিভাগের জন্য বার বার অনুরোধ করতেন। একদিন