পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৬
মহাভারত

সহস্র বিপক্ষ যোদ্ধাকে সংহার করেছেন সেই ভীষ্মের গাত্রে দুই অঙ্গলি পরিমাণ স্থানও অবিদ্ধ রইল না। সূর্যাস্তের কিঞ্চিৎ পূর্বে অর্জুনের শরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হ’য়ে ভীষ্ম পূর্ব দিকে মাথা রেখে রথ থেকে পড়ে গেলেন। আকাশে দেবগণ এবং ভূতলে রাজগণ হা হা ক’রে উঠলেন। উন্মূলিত ইন্দ্রধ্বজের ন্যায় ভীষ্ম রণভূমি অনুনাদিত ক’রে নিপতিত হলেন, কিন্তু শরে আবৃত থাকায় তিনি ভূমি স্পর্শ করলেন না। দক্ষিণ দিকে সূর্য দেখে ভীষ্ম বুঝলেন এখন দক্ষিণায়ন। তিনি আকাশ থেকে এই বাক্য শুনলেন—মহাত্মা নরশ্রেষ্ঠ গাঙ্গেয় দক্ষিণায়নে কি ক’রে প্রাণত্যাগ করবেন? ভীষ্ম বললেন, ভূতলে পতিত থেকেই আমি উত্তরায়ণের প্রতীক্ষায় প্রাণধারণ করব।

 মানসসরোবরবাসী মহর্ষিগণ হংসের রূপ ধ’রে ভীষ্মকে দর্শন করতে এলেন। ভীষ্ম বললেন, হংসগণ, সূর্য দক্ষিণায়নে থাকতে আমি মরব না, উত্তরায়ণেই দেহত্যাগ করব, পিতা শান্তনুর বরে মৃত্যু আমার ইচ্ছাধীন।

 কৌরবগণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেন। কৃপ দুর্যোধন প্রভৃতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোদন করতে লাগলেন, তাঁদের আর যুদ্ধে মন গেল না, যেন ঊরুস্তম্ভে আক্রান্ত হ’য়ে রইলেন। বিজয়ী পাণ্ডবগণ শঙ্খধ্বনি ও সিংহনাদ করতে লাগলেন। শান্তনুপুত্র ভীষ্ম যোগস্থ হ’য়ে মহোপনিষৎ জপে নিরত থেকে মৃত্যুকালের প্রতীক্ষায় রইলেন।

১৮। শরশয্যায় ভীষ্ম

 ভীষ্ম শরশয্যায় শয়ন করলে কৌরব ও পাণ্ডবগণ যুদ্ধে নিবৃত্ত হলেন। সকলে বলতে লাগলেন, ইনি ব্রহ্মবিদগণের শ্রেষ্ঠ, এই মহাপুরুষ পিতা শান্তনুকে কামার্ত জেনে নিজে ঊর্দ্ধরেতা হয়েছিলেন। পাণ্ডবসৈন্যমধ্যে সহস্র সহস্র তূর্য ও শঙ্খ বাজতে লাগল, ভীমসেন মহাহর্ষে ক্রীড়া করতে লাগলেন। দুঃশাসনের মুখে ভীষ্মের পতনসংবাদ শুনে দ্রোণ মূর্ছিত হলেন এবং সংজ্ঞালাভের পর নিজ সৈন্যগণকে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করলেন। রাজারা বর্ম ত্যাগ ক’রে ভীষ্মের নিকট উপস্থিত হলেন, কৌরব ও পাণ্ডবগণ তাঁকে প্রণাম ক’রে সম্মুখে দাঁড়ালেন।

 সকলকে স্বাগত সম্ভাষণ ক’রে ভীষ্ম বললেন, মহারথগণ, তোমাদের দর্শন ক’রে আমি তুষ্ট হয়েছি। আমার মাথা ঝুলছে, উপধান (বালিশ) দাও। রাজারা কোমল উত্তম উপধান নিয়ে এলে ভীষ্ম সহাস্যে বললেন, এসব উপধান বীরশয্যার