পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৪০৭

উপযুক্ত নয়। তিনি অর্জুনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে অর্জুন অশ্রুপূর্ণনয়নে বললেন, পিতামহ, আদেশ করুন কি করতে হবে। ভীষ্ম বললেন, বৎস, তুমি ক্ষত্রধর্ম জান, বীরশয্যার উপযুক্ত উপধান আমাকে দাও। মন্ত্রপূত তিন বাণ গাণ্ডীব ধনু দ্বারা নিক্ষেপ ক’রে অর্জুন ভীষ্মের মাথা তুলে দিলেন। ভীষ্ম তুষ্ট হ’য়ে বললেন, রাজগণ, অর্জুন আমাকে কিরূপ উপধান দিয়েছেন দেখ উত্তরায়ণের আরম্ভ পর্যন্ত আমি এই শয্যায় শুয়ে থাকব, সূর্য যখন উত্তর দিকে গিয়ে সর্বলোক প্রতপ্ত করবেন তখন আমার প্রিয় সুহৃৎ তুল্য প্রাণ ত্যাগ করব। তোমরা আমার চতুর্দিকে পরিখা খনন করিয়ে দাও।

 শল্য উদ্ধারে নিপুণ বৈদ্যগণ চিকিৎসার উপকরণ নিয়ে উপস্থিত হলেন। ভীষ্ম দুর্যোধনকে বললেন, তুমি এঁদের উপযুক্ত ধন দিয়ে সসম্মানে বিদায় কর। বৈদ্যের প্রয়োজন নেই, আমি ক্ষত্রিয়ের প্রশস্ত গতি লাভ করেছি, এইসকল শর সমেত যেন আমাকে দাহ করা হয়। সমাগত রাজারা এবং কৌরব ও পাণ্ডবগণ ভীষ্মকে অভিবাদন ও তিন বার প্রদক্ষিণ করলেন, তার পর তাঁর রক্ষার ব্যবস্থা ক’রে শোকার্ত মনে নিজ নিজ শিবিরে চলে গেলেন।

 রাত্রি প্রভাত হ’লে সকলে পুনর্বার ভীষ্মের নিকটে এলেন। বহু সহস্র কন্যা ভীষ্মের দেহে চন্দনচূর্ণ লাজ ও মাল্য অর্পণ করতে লাগল। স্ত্রী বালক বৃদ্ধ তূর্যবাদক নট নর্তক ও শিল্পিগণও তাঁর কাছে এল। কৌরব ও পাণ্ডবগণ বর্ম ও আয়ূধ ত্যাগ ক’রে পূর্বের ন্যায় পরস্পর প্রীতিসহকারে বয়স অনুসারে ভীষ্মের নিকট উপস্থিত হলেন। ধৈর্য বলে বেদনা নিগৃহীত ক’রে ভীষ্ম রাজাদের দিকে দৃষ্টিপাত ক’রে জল চাইলেন। সকলে নানাপ্রকার খাদ্য ও শীতল জলের কলস নিয়ে এলেন। ভীষ্ম বললেন, বৎসগণ, আমি মানুষের ভোগ্য বস্তু নিতে পারি না। তার পর তিনি অর্জুনকে বললেন, তোমার বাণে আমার শরীর গ্রথিত হয়েছে, বেদনায় মুখ শুষ্ক হচ্ছে, তুমি আমাকে বিধিসম্মত জল দাও।

 ভীষ্মকে প্রদক্ষিণ ক’রে অর্জুন রথে উঠলেন এবং মন্ত্রপাঠের পর গাণ্ডীবে পর্জন্যাস্ত্রযুক্ত বাণ সন্ধান ক’রে ভীষ্মের দক্ষিণ পার্শ্বের ভূমি বিদ্ধ করলেন। সেখান থেকে অমৃততুল্য দিব্যগন্ধ স্বাদু নির্মল শীতল জলধারা উত্থিত হ’ল, অর্জুন সেই জলে ভীষ্মকে তৃপ্ত করলেন। রাজারা বিস্মিত হ’য়ে উত্তরীয় নাড়তে লাগলেন, চতুর্দিকে তুমুল রবে শঙ্খ ও দুন্দুভি বেজে উঠল।

 ভীষ্ম দুর্যোধনকে বললেন, বৎস, তুমি অর্জুনকে জয় করতে পারবে না, তাঁর সঙ্গে সন্ধি কর। পাণ্ডবদের সঙ্গে তোমার সৌহার্দ্য হ’ক, তুমি তাঁদের অর্ধ