পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৮
মহাভারত

হংস ছিল। যে হস্তীতে চ’ড়ে ইন্দ্র দৈত্যদানব জয় করেছিলেন, সেই হস্তীর বংশধরের পৃষ্ঠে চ’ড়ে ভগদত্ত ভীমের প্রতি ধাবিত হলেন। পাঞ্চাল সৈন্য সহ যুধিষ্ঠির তাঁকে বাধা দিতে গেলেন। ভগদত্তের সঙ্গে যুদ্ধে দশার্ণরাজ নিহত হলেন, পাঞ্চালসৈন্য ভয়ে পালাতে লাগল।

 হস্তীর গর্জন শুনে অর্জুন বললেন, কৃষ্ণ, এ নিশ্চয় ভগদত্তের বাহনের শব্দ, এই হস্তী অস্ত্রের আঘাত এবং অগ্নির স্পর্শও সইতে পারে, সে আজ সমস্ত পাণ্ডবসৈন্য বিনষ্ট করবে। তুমি সত্বর ভগদত্তের কাছে রথ নিয়ে চল, তাঁকে আজ আমি ইন্দ্রের অতিথি ক’রে পাঠাব। অর্জুন যাত্রা করলে চোদ্দ হাজার সংশপ্তক মহারথ এবং দশ হাজার ত্রিগর্ত যোদ্ধা চার হাজার নারায়ণসৈন্য সহ তাঁর অনুসরণ করলেন। দুর্যোধন ও কর্ণের উদ্‌ভাবিত এই কৌশলে অর্জুন সংশয়াপন্ন হয়ে ভাবতে লাগলেন, সংশপ্তকদের সঙ্গে যুদ্ধ করব, না যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা করতে যাব? তিনি সংশপ্তকগণকে বধ করাই উচিত মনে করলেন, এবং ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ ক’রে তাদের প্রায় নিঃশেষ করে ফেললেন। তার পর তিনি কৃষ্ণকে বললেন, ভগদত্তের কাছে চল।

 ত্রিগর্তরাজ সুশর্মা ও তাঁর ভ্রাতারা অর্জুনের অনুসরণ করছিলেন। অর্জুন শরবর্ষণ করে সুশর্মাকে নিরস্ত এবং তাঁর ভ্রাতাদের বিনষ্ট করলেন। তার পর গজারোহী ভগদত্তের সঙ্গে রথারোহী অর্জনের তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হ’ল। কৃষ্ণার্জুনকে বধ করবার জন্য ভগদত্ত তাঁর হস্তীকে চালিত করলেন, কৃষ্ণ সত্বর দক্ষিণ পার্শ্বে রথ সরিয়ে নিলেন। যুদ্ধধর্ম স্মরণ ক’রে অর্জুন বাহনসমেত ভগদত্তকে পিছন থেকে মারতে ইচ্ছা করলেন না।

 অর্জুনের শরাঘাতে ভগদত্তের হস্তীর বর্ম ছিন্ন হয়ে ভূপতিত হ’ল। ভগদত্ত মন্ত্র পাঠ করে বৈষ্ণবাস্ত্র নিক্ষেপ করলেন, অর্জুনকে পশ্চাতে রেখে কৃষ্ণ সেই অস্ত্র নিজের বক্ষে গ্রহণ করলেন। বৈষ্ণবাস্ত্র বৈজয়ন্তী মালা হয়ে কৃষ্ণের বক্ষে লগ্ন হ’ল। অর্জুন দুঃখিত হয়ে বললেন, কৃষ্ণ, তুমি বলেছিলে যে যুদ্ধ করবে না, কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা রাখলে না। আমি সতর্ক ও অস্ত্রনিবারণে সমর্থ থাকতে তোমার এমন করা উচিত হয় নি।

 কৃষ্ণ বললেন, একটি গুহ্য কথা বলছি শোন।—আমি চার মূর্তিতে বিভক্ত হয়ে লোকের হিতসাধন করি। আমার এক মূর্তি তপস্যা করে, দ্বিতীয় মূর্তি জগতের সাধু ও অসাধু কর্ম দেখে, তৃতীয় মূর্তি মনুষ্যালোকে কর্ম করে, এবং চতুর্থ মূর্তি সহস্র বৎসর শয়ন ক’রে নিদ্রিত থাকে। সহস্র বৎসরের অন্তে