পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
মহাভারত

ক্ষুরধার লৌহচক্র নিরন্তর ঘুরছে। তিনি তাঁর দেহ সংকুচিত ক’রে চক্রের অরের অন্তরাল দিয়ে প্রবেশ ক’রে দেখলেন, অমৃত রক্ষার জন্য দুই ভয়ংকর সর্প চক্রের নিম্নদেশে রয়েছে। গরুড় তাদের বধ ক’রে অমৃত নিয়ে আকাশে এসে বিষ্ণুর দর্শন পেলেন। গরুড় অমৃতপানের লোভ সংবরণ করেছেন দেখে বিষ্ণু প্রীত হয়ে বললেন, তোমাকে বর দেব। গরুড় বললেন, আমি তোমার উপরে থাকতে এবং অমৃতপান না ক’রেই অজর অমর হ’তে ইচ্ছা করি। বিষ্ণু বললেন, তাই হবে। তখন গরুড় বললেন, ভগবান, তুমিও আমার কাছে বর চাও। বিষ্ণু বললেন, তুমি আমার বাহন হও, আমার রথধ্বজের উপরেও থেকো। গরুড় তাই হবে ব’লে মহাবেগে প্রস্থান করলেন।

 তখন ইন্দ্র তাঁকে বজ্রাঘাত করলেন। গরুড় সহাস্যে বললেন, শতক্রতু, দধীচি মুনি, তাঁর অস্থিজাত বজ্র, এবং তোমার সম্মানের নিমিত্ত আমি একটি পালক ফেলে দিলাম, তোমার বজ্রপাতে আমার কোনও ব্যথা হয় নি। গরুড়ের নিক্ষিপ্ত সেই সুন্দর পালক দেখে সকলে আনন্দিত হয়ে তাঁর নাম দিলেন ‘সুপর্ণ’। ইন্দ্র তাঁর সঙ্গে সখ্য স্থাপন ক’রে বললেন, যদি তোমার অমৃতে প্রয়োজন না থাকে তবে আমাকে ফিরিয়ে দাও, কারণ তুমি যাদের দেবে তারাই আমাদের উপর উপদ্রব করবে। গরুড় বললেন, কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে আমি অমৃত নিয়ে যাচ্ছি, যেখানে আমি রাখব সেখান থেকে তুমি হরণ ক’রো। ইন্দ্র তুষ্ট হয়ে বর দিতে চাইলে গরুড় বললেন, মহাবল সর্পগণ আমার ভক্ষ্য হ’ক। ইন্দ্র বললেন, তাই হবে।

 তার পর গরুড় বিনতার কাছে এলেন এবং সর্পভ্রাতাদের বললেন, আমি অমৃত এনেছি, এই কুশের উপর রাখছি, তোমরা স্নান ক’রে এসে খেয়ো। এখন তোমাদের কথা রাখ, আমার মাতাকে দাসীত্ব থেকে মুক্ত কর। তাই হ’ক বলে সর্পরা স্নান করতে গেল, সেই অবসরে ইন্দ্র অমৃত হরণ করলেন। সর্পের দল ফিরে এসে ‘আমি আগে, আমি আগে’ ব’লে অমৃত খেতে গেল, কিন্তু না পেয়ে কুশ চাটতে লাগল, তার ফলে তাদের জিহ্বা দ্বিধা বিভক্ত হ’ল।

৮। আস্তীকের জন্ম—পরীক্ষিতের মৃত্যুবিবরণ

 শৌনক বললেন, কদ্রুর অভিশাপ[১] শুনে তাঁর পুত্রেরা কি করেছিল বল।

  1. ৭-পরিচ্ছেদে।