পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২৪
মহাভারত

৭। যুধিষ্ঠির সকাশে ব্যাস ― মৃত্যুর উপাখ্যান

 অভিমন্যুর শোকে যুধিষ্ঠির বিলাপ করতে লাগলেন—কেশরী যেমন গোমধ্যে প্রবেশ করে সেইরূপ অভিমন্যু আমার প্রিয়কার্য করবার জন্য দ্রোণব্যূহের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। মহাধনুর্ধর দুর্ধর্ষ শত্রুগণকে পরাস্ত ক’রে দ্রোণসৈন্যসাগর উত্তীর্ণ হয়ে পরিশেষে সে দুঃশাসনপুত্রের হাতে নিহত হ’ল। হা, হৃষীকেশ আর ধনঞ্জয়কে আমি কি বলব? নিজের প্রিয়সাধন ও জয়লাভের জন্য আমি সুভদ্রা অর্জুন ও কেশবের অপ্রিয় কার্য করেছি। বালকের স্থান ভোজনে গমনে শয়নে ও ভূষণে সর্বাগ্রে, কিন্তু তাকে আমরা যুদ্ধেই অগ্রবর্তী করেছিলাম। অর্জুনপুত্রের এই মৃত্যুর পর জয়লাভ রাজ্যলাভ অমরত্ব বা দেবলোকে বাস কিছুই আমার প্রীতিকর হবে না।

 এই সময়ে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস যুধিষ্ঠিরের নিকটে এলেন। তিনি বললেন, মহাপ্রাজ্ঞ, তোমার তুল্য লোকের বিপদে মোহগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়। পুরুষশ্রেষ্ঠ অভিমন্যু যা করেছেন তা বালকে পারে না, তিনি বহু শত্রু বধ ক’রে স্বর্গে গেছেন। দেব দানব গন্ধর্ব সকলেই মৃত্যুর অধীন, এই বিধান অতিক্রম করা যায় না। যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, মৃত্যু কেন হয় তা বলুন। ব্যাসদেব বললেন, পুরাকালে অকম্পন রাজাকে নারদ যে ইতিহাস বলেছিলেন তা শোন।

 সত্যযুগে অকম্পন নামে এক রাজা ছিলেন, হরি নামে তাঁর একটি অস্ত্রবিশারদ মেধাবী বলবান পুত্র ছিল। এই রাজপত্র যুদ্ধে নিহত হ’লে অকম্পন সর্বদা শোকাবিষ্ট হয়ে থাকতেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেবার জন্য দেবর্ষি নারদ এই পুত্রশোকনাশক আখ্যান বলেছিলেন।—

 প্রাণিসৃষ্টির পর ব্রহ্মা ভাবতে লাগলেন, এদের সংহার কোন্ উপায়ে হবে। তখন তাঁর ক্রোধপ্রভাবে আকাশে অগ্নি উৎপন্ন হয়ে চরাচর সর্ব জগৎ দগ্ধ করতে লাগল। প্রজাগণের হিতকামনায় মহাদেব ব্রহ্মার শরণ নিলেন। ব্রহ্মা বললেন, পুত্র, তুমি আমার সংকল্পজাত, কি চাও বল। মহাদেব বললেন, প্রভু, আপনার সৃষ্ট প্রজাবর্গ আপনার ক্রোধেই দগ্ধ হচ্ছে, আপনি প্রসন্ন হ’ন। ব্রহ্মা বললেন, আমি অকারণে ক্রুদ্ধ হই নি, দেবী পৃথিবী ভারে আর্ত হয়ে প্রাণিসংহারের নিমিত্ত আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, কোনও উপায় খুঁজে না