পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪২৫

পাওয়ায় আমার ক্রোধ জন্মেছিল। মহাদেবের প্রার্থনায় ব্রহ্মা তাঁর ক্রোধজাত অগ্নি স্বদেহে ধারণ করলেন। তখন তাঁর সকল ইন্দ্রিয়দ্বার থেকে এক পিঙ্গলবর্ণা রক্তাননা রক্তনয়না স্বর্ণকুণ্ডলধারিণী নারী আবির্ভূত হলেন। ব্রহ্মা তাঁকে বললেন, মৃত্যু, তুমি আমার নিয়োগ অনুসারে সকল প্রাণী সংহার কর।

 সরোদনে কৃতাঞ্জলি হয়ে মৃত্যু বললেন, প্রভু, আমি নারী রূপে সৃষ্ট হয়ে কি ক’রে এই ক্রূর কর্ম করব? আমি যাকে মারব তার আত্মীয়রা আমার অনিষ্টচিন্তা করবে, আমি তা ভয় করি। লোকে যখন বিলাপ করবে তখন আমি তাদের প্রিয় প্রাণ হরণ করতে পারব না; আপনি অধর্ম থেকে আমাকে রক্ষা করুন। ব্রহ্মা বললেন, তুমি বিচার ক’রো না, আমার আদেশে সকল প্রাণী সংহার কর, তুমি জগতে অনিন্দিতা হবে।

 মৃত্যু সম্মত হলেন না, ধেনুক ঋষির আশ্রমে গিয়ে কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন। ব্রহ্মা তুষ্ট হয়ে বর দিতে এলে মৃত্যু বললেন, প্রভু, সুস্থ প্রাণীকে আমি হত্যা করতে চাই না, আমি আর্ত ভীত ও নিরপরাধ, আমাকে অভয় দিন। ব্রহ্মা বললেন, কল্যাণী, তোমার অধর্ম হবে না, তুমি সকল প্রাণী সংহার করতে থাক। সনাতন ধর্ম তোমাকে সর্বপ্রকারে পবিত্র রাখবেন, লোকপাল যম তোমার সহায় হবেন, ব্যাধি সকলও তোমাকে সাহায্য করবে। আমার ও দেবগণের বরে তুমি নিষ্পাপ হয়ে খ্যাতিলাভ করবে। মৃত্যু বললেন, আপনার আদেশ আমার শিরোধার্য, কিন্তু লোভ ক্রোধ অসূয়া দ্রোহ মোহ অলজ্জা ও পুরুষ আচরণ—এই সকল দোষে দেহ বিদ্ধ হ’লেই আমি সংহার করব। ব্রহ্মা বললেন, মৃত্যু, তাই হবে, তোমার অশ্রুবিন্দু আমার হাতে পড়েছিল, তাই ব্যাধি হয়ে প্রাণিদের বধ করবে, তোমার অধর্ম হবে না।

 তার পর নারদ অকম্পনকে বললেন, মহারাজ, ব্রহ্মার আজ্ঞায় মৃত্যুদেবী অনাসক্তভাবে অন্তকালে প্রাণীদের প্রাণ হরণ করেন, অতএব তুমি নিষ্ফল শোক ক’রো না। জীব পরলোকে গেলে ইন্দ্রিয়সকল সূক্ষ্মশরীরে অবস্থান করে, কর্মক্ষয় হ’লে আবার অন্য শরীর আশ্রয় ক’রে মর্ত্যে আসে। প্রাণবায়ু, দেহ ভেদ করে বহির্গত হ’লে আর ফিরে আসে না। তোমার পুত্র স্বর্গ লাভ করে বীরলোকে আনন্দে আছে, মর্ত্যের দুঃখ ত্যাগ ক’রে স্বর্গে পুণ্যবানদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।