পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২৬
মহাভারত

৮। সুবর্ণষ্ঠীবীর উপাখ্যান

 মৃত্যুর উপাখ্যান শোনার পর যুধিষ্ঠির বললেন, ভগবান, আপনি আমাকে পুণ্যকর্মা ইন্দ্রতুল্যবিক্রমশালী নিষ্পাপ সত্যবাদী রাজর্ষিদের কথা বলুন। ব্যাসদেব এই উপাখ্যান বললেন।—

 একদিন দেবর্ষি নারদ ও পর্বত তাঁদের সখা শ্বিত্যপুত্র রাজা সৃঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তাঁরা সুখে উপবিষ্ট হ’লে একটি শুচিস্মিতা বরবর্ণিনী কন্যা তাঁদের কাছে এলেন। পর্বত ঋষি জিজ্ঞাসা করলেন, এই চঞ্চলনয়না সর্বলক্ষণযযুক্তা কন্যাটি কার? এ কি সূর্যের দীপ্তি, না অগ্নির শিখা, না শ্রী হ্রী কীর্তি ধৃতি পুষ্টি সিদ্ধি, কিংবা চন্দ্রমার প্রভা? সৃঞ্জয় বললেন, এ আমারই কন্যা। নারদ বললেন, রাজা, যদি সুমহৎ শ্রেয় লাভ করতে চাও তবে এই কন্যাটিকে ভার্যারূপে আমাকে দাও। তখন পর্বত ঋষি ক্রুদ্ধ হয়ে নারদকে বললেন, আমি পূর্বে যাকে মনে মনে বরণ করেছি তাকেই তুমি চাচ্ছ! ব্রাহ্মণ, তুমি আর নিজের ইচ্ছানুসারে স্বর্গে যেতে পারবে না। নারদ বললেন, মন্ত্রপাঠাদির দ্বারা বিবাহ সম্পূর্ণ হয় না, সপ্তপদীগমনেই সম্পূর্ণ হয়। এই কন্যা আমার ভার্যা হবার পূর্বেই তুমি আমাকে শাপ দিলে, অতএব তুমিও আমার সঙ্গে ভিন্ন স্বর্গে যেতে পারবে না। পরস্পর অভিশাপের পর নারদ ও পর্বত সঞ্জয়ের নিকটেই বাস করতে লাগলেন।

 রাজা সৃঞ্জয় তপস্যাপরায়ণ বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণকে সেবা দ্বারা তুষ্ট ক’রে বর চাইলেন, যেন তাঁর গুণবান যশস্বী কীর্তিমান তেজস্বী ও শত্রুনাশন পুত্র হয়। বর পেয়ে যথাকালে তাঁর একটি পুত্র হ’ল। এই পুত্রের মূত্র পুরীষ ক্লেদ ও স্বেদ সুবর্ণনয়, সেজন্য তার নাম হ’ল সুবর্ণষ্ঠীবী। রাজা ইচ্ছামত সকল বস্তু স্বর্ণে রূপান্তরিত করতে লাগলেন, কালক্রমে তাঁর গৃহ প্রাকার দুর্গ ব্রাহ্মণাবাস শয্যা আসন যান স্থালী প্রভৃতি সবই স্বর্ণময় হল। এক দল দস্যু লুব্ধ হয়ে স্বর্ণের আকরস্বরূপ রাজপুত্রকে হরণ ক’রে বনে নিয়ে গেল। তারা সুবর্ণষ্ঠীবীকে কেটে খণ্ড খণ্ড করলে, কিন্তু তাদের কোনও অর্থলাভ হ’ল না। রাজপুত্রের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে রাজার সমস্ত ধন লুপ্ত হ’ল, মূর্খ দস্যুরাও বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে পরস্পরকে বধ ক’রে নরকে গেল।

 সৃঞ্জয় রাজা পুত্রশোকে মৃতপ্রায় হয়ে বিলাপ করতে লাগলেন। নারদ তাঁকে বললেন, আমরা ব্রহ্মবাদী বিপ্রগণ তোমার গৃহে বাস করছি, আর তুমি