পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২৮
মহাভারত

 নারদ সৃঞ্জয়কে বললেন, আমার কথা তুমি শুনলে কি? না শূদ্রার ব্রাহ্মণ পতি শ্রাদ্ধ করলে যেমন নিষ্ফল হয়, আমার বাক্যও সেইরূপ নিষ্ফল হ’ল? সঞ্জয় করজোড়ে বললেন, সূর্যের কিরণে যেমন অন্ধকার দূর হয় সেইরূপ আপনার আখ্যান শুনে আমার পুত্রশোক দূর হয়েছে। নারদ বললেন, তুমি অভীষ্ট বর চাও, আমাদের কথা মিথ্যা হবে না। সৃঞ্জয় বললেন, ভগবান, আপনি প্রসন্ন হয়েছেন তাতেই আমি হৃষ্ট হয়েছি। নারদ বললেন, তোমার পুত্র দস্যুহস্তে বৃথা নিহত হয়েছে, তাকে কষ্টময় নরক থেকে উদ্ধার ক’রে তোমাকে দান করছি। তখন নারদের বরে সুবর্ণষ্ঠীবী পুনর্জীবিত হ’ল।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে ব্যাস যুধিষ্ঠিরকে বললেন, সৃঞ্জয়ের পুত্র বালক, সে ভয়ার্ত ও যুদ্ধে অক্ষম ছিল, কৃতকর্মা না হয়ে যজ্ঞ না ক’রে নিঃসন্তান অবস্থায় মরেছিল, এজন্যই সে পুনর্জীবন পেয়েছিল। কিন্তু অভিমন্যু মহাবীর ও কৃতকর্মা, তিনি বহু সহস্র শত্রুকে সন্তপ্ত ক’রে সম্মুখ সমরে নিহত হয়ে অক্ষয় স্বর্গলোকে গেছেন, সেখান থেকে কেউ মর্ত্যে আসতে চায় না। অতএব অর্জুনের পুত্রকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। তিনি অমৃতকিরণে উদ্ভাসিত হয়ে চন্দ্রের ন্যায় বিরাজ করছেন, তাঁর জন্য শোক করা উচিত নয়। মহারাজ, তুমি ধৈর্য ধারণ ক’রে শত্রু জয় কর। এই ব’লে ব্যাস চ’লে গেলেন।


॥প্রতিজ্ঞাপর্বাধ্যায়॥

৯। অর্জুনের প্রতিজ্ঞা

 সেইদিন সায়াহ্ণকালে দু পক্ষের সৈন্য যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হ’লে অর্জুন সংশপ্তকগণকে বধ ক’রে নিজ শিবিরে যাত্রা করলেন। তিনি যেতে যেতে সাশ্রুকণ্ঠে বললেন, কেশব, আমার হৃদয় ত্রস্ত হচ্ছে কেন? আমি কথা বলতে পাবছি না, শরীর অবসন্ন হচ্ছে, বহু অশভ লক্ষণ দেখছি। আমার ভ্রাতারা কুশলে আছেন তো? কৃষ্ণ বললেন, তুমি চিন্তিত হয়ো না, তাঁরা ভালই আছেন, হয়তো সামান্য কিছু অনিষ্ট হয়ে থাকবে।

 নিরানন্দ আলোকহীন শিবিরে উপস্থিত হয়ে অর্জুন দেখলেন, মাঙ্গলিক বাদ্য বাজছে না, শঙ্খধ্বনি হচ্ছে না, ভ্রাতারা যেন অচেতন হয়ে রয়েছেন। উদ্‌বিগ্ন হয়ে অর্জুন তাঁদের বললেন, আপনারা সকলে ম্লানমুখে রয়েছেন,