পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪২৯

অভিমন্যুকে দেখছি না। শুনেছি দ্রোণ চক্রব্যূহ রচনা করেছিলেন, অভিমন্যু ভিন্ন আপনাদের আর কেউ তা ভেদ করতে পারেন না। কিন্তু তাকে আমি প্রবেশ করতেই শিখিয়েছি, নির্গমের প্রণালী শেখাই নি। ব্যূহমধ্যে প্রবেশ ক’রে অভিমন্যু কি নিহত হয়েছে? সুভদ্রার প্রিয় পুত্র, দ্রৌপদী কৃষ্ণ ও আমার স্নেহভাজন অভিমন্যুকে কে বধ করেছে? যার কেশপ্রান্ত কুঞ্চিত, চক্ষু হরিণশাবকের ন্যায়, দেহ নব শাল তরুর ন্যায়; যে সর্বদা স্মিতমুখে কথা বলে, গুরুনের আজ্ঞা পালন করে, বালক হয়েও বয়স্থের ন্যায় কার্য করে; যে যুদ্ধে প্রথম প্রহার করে না, অধীরও হয় না, যে মহারথ ব’লে গণ্য, যার বিক্রম আমার চেয়ে অর্ধ গুণ অধিক, যে কৃষ্ণ প্রদ্যুম্ন ও আমার প্রিয় শিষ্য, সেই পুত্রকে যদি দেখতে না পাই তবে আমি যমসদনে যাব। হা পুত্র, আমি ভাগ্যহীন তাই তোমাকে সর্বদা দেখেও আমার তৃপ্তি হ’ত না। যম তোমাকে সবলে নিয়ে গেছেন, তুমি দেবগণের প্রিয় অতিথি হয়েছ।

 তার পর অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, অভিমন্যু শত্রুনিপীড়ন ক’রে সম্মুখ যুদ্ধে স্বর্গারোহণ করেছে তো? কর্ণ দ্রোণ প্রভৃতির বাণে কাতর হয়ে সে নিশ্চয় বার বার বিলাপ করেছে—যদি পিতা এসে আমাকে রক্ষা করতেন! সেই অবস্থায় নৃশংসগণ তাকে নিপাতিত করেছে। অথবা, যে আমার পুত্র, কৃষ্ণের ভাগিনেয়, সুভদ্রার গর্ভজাত, সে এমন বিলাপ করতে পারে না। তাকে না দেখে সুভদ্রা আর দ্রৌপদী কি বলবেন, আমিই বা তাঁদের কি বলব? আমার হৃদয় নিশ্চয় বজ্রসারময়, শোকার্তা বধূ উত্তরার রোদনেও তা বিদীর্ণ হবে না। আমি গর্বিত ধার্তরাষ্ট্রগণের সিংহনাদ শুনেছিলাম, কৃষ্ণও যুযুৎসুকে বলতে শনেছেন—অধর্মজ্ঞ মহারথগণ, অর্জুনের পরিবর্তে একটি বালককে বধ ক’রে চিৎকার করছ কেন?

 পত্রশোকার্ত অর্জুনকে ধ’রে কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, ক্ষান্ত হও, সকল ক্ষত্রিয় বীরেরই এই পথা, অভিমন্যু পুণ্যার্জিতলোকে গেছেন তাতে সংশয় নেই। সকল বীরেরই এই আকাঙ্ক্ষা—যেন সম্মুখ যুদ্ধে আমার মৃত্যু হয়। ভরতশ্রেষ্ঠ, তোমাকে শোকাবিষ্ট দেখে তোমার ভ্রাতারা, এই রাজারা, এবং সুহৃদ্‌গণ সকলেই কাতর হয়েছেন। তুমি সান্ত্বনা দিয়ে এঁদের আশ্বস্ত কর। যা জ্ঞাতব্য তা তুমি জান, অতএব শোক ক’রো না।

 গদ্‌গদকণ্ঠে অর্জুন ভ্রাতাদের বললেন, অভিমন্যুর মৃত্যু কি ক’রে হ’ল শুনতে ইচ্ছা করি। আপনারা রথারোহী হ’য়ে শরবর্ষণ করছিলেন, শত্রুরা অন্যায়