পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৩১

আকাশে দেবপুরে বা দানবপুরে যেখানেই যাক, আমি শরাঘাতে তার শিরশ্ছেদন করব।

 অর্জন বামে ও দক্ষিণে গাণ্ডীব ধনুর জ্যাকর্ষণ করলেন, সেই নির্ঘোষ তাঁর কণ্ঠধ্বনি অতিক্রম ক’রে আকাশ স্পর্শ করলে। তার পর কৃষ্ণ পাঞ্চজন্য এবং অর্জুন দেবদত্ত শঙ্খ বাজালেন, আকাশ পাতাল ও পৃথিবী কেঁপে উঠল, নানাবিধ বাদ্যধ্বনি হ’ল, পাণ্ডবগণ সিংহনাদ করলেন।

১০। জয়দ্রথের ভয় — সুভদ্রার বিলাপ

 পাণ্ডবগণের সেই মহানিনাদ শুনে এবং চরমুখে অর্জুনের প্রতিজ্ঞার সংবাদ জেনে জয়দ্রথ উদ্‌বিগ্ন হয়ে দুর্যোধনাদিকে বললেন, পাণ্ডুর পত্নীর গর্ভে কামুক ইন্দ্রের ঔরসে যে পুত্র জন্মেছিল সেই দুর্বুদ্ধি অর্জুন আমাকে যমালয়ে পাঠাতে চায়। তোমাদের মঙ্গল হ’ক, আমি প্রাণরক্ষার জন্য নিজ ভবনে চ’লে যাব। অথবা তোমরা আমাকে রক্ষা কর, অভয় দাও। পাণ্ডবদের সিংহনাদ শুনে আমার অত্যন্ত ভয় হয়েছে, মুমূর্ষুর ন্যায় শরীর অবসন্ন হয়েছে। তোমরা অনুমতি দাও, আমি আত্মগোপন করি, যাতে পাণ্ডবরা আমাকে দেখতে না পায়। দুর্যোধন বললেন, নরব্যাঘ্র, ভয় পেয়ো না, তুমি ক্ষত্রিয় বীরগণের মধ্যে থাকলে কে তোমাকে আক্রমণ করবে? আমরা সসৈন্যে তোমাকে রক্ষা করব। তুমি স্বয়ং রথিশ্রেষ্ঠ মহাবীর, তবে পাণ্ডবদের ভয় করছ কেন?

 রাত্রিকালে জয়দ্রথ দুর্যোধনের সঙ্গে দ্রোণের কাছে গিয়ে তাঁকে প্রণাম ক’রে বললেন, আচার্য, অস্ত্রশিক্ষায় অর্জুন আর আমার প্রভেদ কি তা জানতে ইচ্ছা করি। দ্রোণ বললেন, বৎস, আমি তোমাদের সমভাবেই শিক্ষা দিয়েছি, কিন্তু যোগাভ্যাস ও কষ্টভোগ ক’রে অর্জন অধিকতর শক্তিমান হয়েছেন। তথাপি তুমি ভয় পেয়ো না, আমি তোমাকে নিশ্চয় রক্ষা করব। আমি এমন ব্যূহ রচনা করব যা অর্জুন ভেদ করতে পারবেন না। তুমি স্বধর্ম অনুসারে যুদ্ধ কর। মনে রেখো, আমরা কেউ চিরকাল বাঁচব না, কালবশে সকলেই নিজ নিজ কর্মসহ পরলোকে যাব। দ্রোণের কথা শুনে জয়দ্রথ আশ্বস্ত হলেন এবং ভয় ত্যাগ ক’রে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন।

 কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে মন্ত্রণা না ক’রেই প্রতিজ্ঞা করেছ যে কাল জয়দ্রথকে বধ করবে; এই দুঃসাহসের জন্য যেন আমরা উপহাসাস্পদ না হই। আমি কৌরবশিবিরে যে চর পাঠিয়েছিলাম তাদের কাছে শুনেছি, কর্ণ