পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৩৩

চ’লে গেলে! যজ্ঞকারী দানশীল ব্রহ্মচর্য পরায়ণ গুরুশুশ্রূষাকারী ব্রাহ্মণদের যে গতি, যুদ্ধে অপরাঙ্‌মুখ শত্রুহন্তা বীরগণের যে গতি, একভার্য পুরুষের যে গতি, সদাচার ও চতুরাশ্রমীর পুণ্য রক্ষাকারী রাজা এবং সর্বভূতের প্রতি প্রীতিযুক্ত অনিষ্ঠুর লোকের যে গতি, তুমি সেই গতি লাভ কর।

 সুভদ্রা উত্তরার সঙ্গে এইরূপ বিলাপ করছিলেন এমন সময় দ্রৌপদী সেখানে এলেন এবং সকলে শোকাকুল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে উন্মত্তের ন্যায় সংজ্ঞাহীন হয়ে প’ড়ে গেলেন। জলসেচনে তাঁদের সচেতন ক’রে কৃষ্ণ বললেন, সুভদ্রা, শোক ত্যাগ কর; পাঞ্চালী, উত্তরাকে সান্ত্বনা দাও। অভিমন্যু ক্ষত্রিয়োচিত উত্তম গতি পেয়েছেন, আমাদের বংশের সকলেই যেন এই গতি পায়। তিনি যে মহৎ কর্ম করেছেন, আমরা ও আমাদের সুহৃদ্‌গণও যেন সেইরূপ কর্ম করতে পারি।

১১। অর্জুনের স্বপ্ন

 সুভদ্রা প্রভৃতির নিকট বিদায় নিয়ে কৃষ্ণ অর্জুনের জন্য কুশ দিয়ে একটি শয্যা রচনা করলেন এবং তার চতুর্দিক মাল্য গন্ধদ্রব্য লাজ ও অস্ত্রশস্ত্রে সাজিয়ে দিলেন। পরিচারকগণ সেই শয্যার নিকটে মহাদেবের নৈশপূজার উপকরণ বেখে দিলে। কৃষ্ণের উপদেশ অনুসারে অর্জুন পূজা করলেন, তার পর কৃষ্ণ নিজের শিবিরে ফিরে গেলেন।

 সেই রাত্রিতে পাণ্ডবশিবিরে কারও নিদ্রা হ’ল না, সকলেই উদ্‌বিগ্ন হয়ে অর্জুনের দূরূহ প্রতিজ্ঞার বিষয় ভাবতে লাগলেন। মধ্যরাত্রে কৃষ্ণ তাঁর সারথি দারুককে বললেন, আমি কাল এমন কার্য করব যাতে সূর্যাস্তের পূর্বেই অর্জুন জয়দ্রথকে বধ করতে পারবেন। অর্জুনের চেয়ে প্রিয়তর আমার কেউ নেই, তাঁর জন্য আমি কৌরবগণকে সংহার করব। রাত্রি প্রভাত হ’লেই তুমি আমার রথ প্রস্তুত করবে এবং তাতে আমার কৌমোদকী গদা, দিব্য শক্তি, চক্র, ধনুর্বাণ, ছত্র প্রভৃতি রাখবে এবং চার অশ্ব যোজিত করবে। পাঞ্চজন্যের নির্ঘোষ শুনলেই তুমি সত্বর আমার কাছে আসবে। দারুক বললেন, পুরুষব্যাঘ্র, আপনি যাঁর সারথ্য স্বীকার করেছেন সেই অর্জুন নিশ্চয় জয়ী হবেন। আপনি যে আদেশ করলেন আমি তা পালন করব।