পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৩৫

আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছি। অর্জুনের মহাদেবদর্শনের বৃত্তান্ত শুনে সকলে ভূতলে মস্তক রেখে প্রণত হয়ে সাধু সাধু বলতে লাগলেন। তার পর অর্জুন বললেন, সাত্যকি, শুভলক্ষণ দেখতে পাচ্ছি, আজ আমি নিশ্চয় জয়ী হব। আজ কৃষ্ণ আর আমি তোমাদের কাছে থাকব না, তুমি সর্বপ্রযত্নে রাজা যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা ক’রো।


॥জয়দ্রথবধপর্বাধ্যায়॥

১২। জয়দ্রথের অভিমুখে কৃষ্ণার্জুন

(চতুর্দশ দিনের যুদ্ধ)

 প্রভাতকালে দ্রোণ জয়দ্রথকে বললেন, তুমি আমার পশ্চাতে ছ ক্রোশ দূরে সসৈন্যে থাকবে, ভূরিশ্রবা কর্ণ অশ্বত্থামা শল্য বৃষসেন ও কৃপ তোমাকে রক্ষা করবেন। দ্রোণ চক্রশকট ব্যূহ রচনা করলেন। এই ব্যূহের পশ্চাতে পদ্ম নামক এক গর্ভব্যূহ এবং তার মধ্যে এক সূচীব্যূহ নির্মিত হ’ল। কৃতবর্মা সূচীব্যূহের সম্মুখে এবং বিশাল সৈন্যে পরিবেষ্টিত জয়দ্রথ এক পার্শ্বে রইলেন। দ্রোণাচার্য চক্রশকট ব্যূহের মুখে রইলেন।

 পাণ্ডবসৈন্য ব্যূহবদ্ধ হ’লে অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, দুর্যোধন-ভ্রাতা দুর্মর্ষণ যেখানে রয়েছে সেখানে রথ নিয়ে চল, আমি এই গজসৈন্য ভেদ ক’রে শত্রুবাহিনীতে প্রবেশ করব। অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে দুর্মর্ষণ পরাজিত হচ্ছেন দেখে দুঃশাসন সসৈন্যে অর্জুনকে বেষ্টন করলেন, কিন্তু তাঁর শরবর্ষণে নিপীড়িত ও ত্রস্ত হয়ে শকটব্যূহের মধ্যে দ্রোণের নিকট আশ্রয় নিলেন। অর্জুন দুঃশাসনের সৈন্য ধ্বংস ক’রে দ্রোণের কাছে এলেন এবং কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, ভগবান, আমাকে আশীর্বাদ করুন, আপনার অনুগ্রহে আমি এই দুর্ভেদ্য বাহিনীতে প্রবেশ করতে ইচ্ছা করি। আপনি আমার পিতৃতুল্য, ধর্মরাজ ও কৃষ্ণের ন্যায় মাননীয়, অশ্বত্থামার তুল্যই আমি আপনার রক্ষণীয়। আপনি আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করুন। ঈষৎ হাস্য ক’রে দ্রোণ বললেন, অর্জুন, আমাকে জয় না ক’রে জয়দ্রথকে জয় করতে পারবে না।

 দ্রোণের সঙ্গে অর্জুনের তুমুল যুদ্ধ হল। কিছু কাল পরে কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, বৃথা কালক্ষেপ ক’রো না, এখন দ্রোণকে ছাড়। অর্জুন চ’লে যাচ্ছেন দেখে দ্রোণ সহাস্যে বললেন, পাণ্ডুপুত্র, কোথায় যাচ্ছ? শত্রুজয় না ক’রে তুমি তো