পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩৬
মহাভারত

যুদ্ধে বিরত হও না। অর্জুন বললেন, আপনি আমার গুরু, শত্রু নন; আপনাকে পরাজিত করতে পারে এমন পুরুষও কেউ নেই।

 অর্জুন জয়দ্রথের দিকে সত্বর চললেন, পাঞ্চালবীর যুধামন্যু ও উত্তমৌজা তাঁর রক্ষক হয়ে সঙ্গে সঙ্গে গেলেন। কৃতবর্মা ও কাম্বোজদেশীয় শ্রুতায়ু অর্জুনকে বাধা দিতে লাগলেন। বরুণপত্র রাজা শ্রুতায়ুধ কৃষ্ণকে গদাঘাত করলেন, কিন্তু সেই গদা ফিরে এসে শ্রুতায়ুধকেই বধ করলে। অর্জুনের শরাঘাতে কাম্বোজরাজপুত্র সুদক্ষিণ, শ্রুতায়ু ও অচ্যুতায়ু নিহত হলেন। তার পর বহু সহস্র যবন পারদ শক দরদ পুণ্ড্র প্রভৃতি সৈন্য অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এল। এইসকল মুণ্ডিতমস্তক, অর্ধমুণ্ডিতমস্তক, শ্মশ্রুধারী, অপবিত্র, কুটিলানন ম্লেচ্ছ সৈন্য অর্জুনের বাণে নিপীড়িত হয়ে পালিয়ে গেল।

 কৌরবসৈন্য ভগ্ন হচ্ছে দেখে দুর্যোধন দ্রোণকে বললেন, আচার্য, অর্জুন আপনার সৈন্য ভেদ করায় জয়দ্রথের রক্ষকগণ সংশয়াপন্ন হয়েছেন, তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে জীবিত অবস্থায় অর্জুন আপনাকে অতিক্রম করতে পারবেন না। আমি জানি আপনি পাণ্ডবদের হিতেই রত আছেন। আমি আপনাকে উত্তম বৃত্তি দিয়ে থাকি, যথাশক্তি তুষ্ট রাখি, কিন্তু আপনি তা মনে রাখেন না। আমাদের আশ্রয়ে থেকেই আপনি আমাদের অপ্রিয় কর্ম করছেন, আপনি যে মধুলিপ্ত ক্ষুরের তুল্য তা আমি বুঝতে পারি নি। আমি বুদ্ধিহীন, তাই জয়দ্রথ যখন চ’লে যেতে চেয়েছিলেন তখন আপনার ভরসায় তাঁকে বারণ করেছিলাম। আমি আর্ত হয়ে প্রলাপ বকছি, ক্রুদ্ধ হবেন না, জয়দ্রথকে রক্ষা করুন।

 দ্রোণ বললেন, রাজা, তুমি আমার কাছে অশ্বত্থামার সমান। আমি সত্য বলছি শোন। কৃষ্ণ সারথিশ্রেষ্ঠ, তাঁর অশ্বসকল শীঘ্রগামী, অল্প ফাঁক পেলেও তা দিয়ে অর্জুন শীঘ্র যেতে পারেন। তুমি কি দেখতে পাও না আমার বাণ অর্জুনের রথের এক ক্রোশ পিছনে পড়ে? আমার বয়স হয়েছে, শীঘ্র যেতে পারি না। আমি বলেছি যে যুধিষ্ঠিরকে ধরব, তখন তাঁকে ছেড়ে আমি অর্জুনের কাছে যেতে পারি না। অর্জুন আর তুমি একই বংশে জন্মেছ, তুমি বীর কৃতী ও দক্ষ, তুমিই শত্রুতার সৃষ্টি করেছ। ভয় পেয়ো না, তুমি নিজেই অর্জনের সঙ্গে যুদ্ধ কর।

 দুর্যোধন বললেন, আচার্য, আপনাকে যে অতিক্রম করেছে সেই অর্জুনের সঙ্গে আমি কি ক’রে যুদ্ধ করব? দ্রোণ বললেন, তোমার দেহে আমি এই কাঞ্চনময় কবচ বেঁধে দিচ্ছি, কৃষ্ণ অর্জুন বা অন্য কোনও যোদ্ধা এই কবচ ভেদ