পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৩৭

করতে পারবেন না। বৃত্রবধের পূর্বে মহাদেব এই কবচ ইন্দ্রকে দিয়েছিলেন। ইন্দ্রের কাছ থেকে যথাক্রমে অঙ্গিরা, তৎপুত্র বৃহস্পতি, অগ্নিবেশ্য ঋষি এবং পরিশেষে আমি এই কবচ পেয়েছি। কবচ ধারণ ক’রে দুর্যোধন অর্জুনের অভিমুখে গেলেন। পাণ্ডবগণ তিন ভাগে বিভক্ত কৌরবসৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধে করতে লাগলেন।

 সূর্য যখন অস্তাচলের অভিমুখী হলেন কৃষ্ণার্জুন তখনও জয়দ্রথের দিকে যাচ্ছিলেন। অবন্তিদেশীয় বিন্দ ও অনুবিন্দ অর্জুনকে বাধা দিতে এসে নিহত হলেন। অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, আমার অশ্বসকল বাণে আহত ও ক্লান্ত হয়েছে, জয়দ্রথও দূরে রয়েছে। তুমি অশ্বদের শুশ্রূষা কর, আমি শত্রুসৈন্য নিবারণ করব। এই ব’লে অর্জুন রথ থেকে নামলেন এবং অস্ত্রাঘাতে ভূমি ভেদ ক’রে জলাশয় সৃষ্টি করলেন। সহাস্যে সাধু সাধু ব’লে কৃষ্ণ অশ্বদের পরিচর্যা করে এবং জল খাইয়ে সুস্থ করলেন, তার পর পুনর্বার বেগে রথ চালালেন। অর্জুন কৌরবসৈন্য আলোড়ন করতে করতে অগ্রসর হলেন এবং কিছু দূর গিয়ে জয়দ্রথকে দেখতে পেলেন।

 দ্রোণের সৈন্য অতিক্রম করে অর্জুন জয়দ্রথের অভিমুখে যাচ্ছেন দেখে দুর্যোধন সবেগে এসে অর্জুনের রথের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। কৃষ্ণ বললেন, ধনঞ্জয়, ভাগ্যক্রমে দুর্যোধন তোমার বাণের পথে এসে পড়েছেন, এখন ওঁকে বধ কর। অর্জুন ও দুর্যোধন পরস্পরের প্রতি শরাঘাত করতে লাগলেন। অর্জুনের বাণ নিষ্ফল হচ্ছে দেখে কৃষ্ণ বললেন, জলে পাথর ভাসার ন্যায় অদৃষ্টপূর্ব ব্যাপার দেখছি, তোমার বাণে দুর্যোধনের কিছুই হচ্ছে না। তোমার গাণ্ডীবের শক্তি ও বাহুবল ঠিক আছে তো? অর্জুন বললেন, আমার মনে হয় দুর্যোধনের দেহে দ্রোণ অভেদ্য কবচ বেঁধে দিয়েছেন, এর বন্ধনরীতি আমিও ইন্দ্রের কাছ থেকে শিখেছি। কিন্তু দুর্যোধন স্ত্রীলোকের ন্যায় এই কবচ বৃথা ধারণ ক’রে আছে, কবচ থাকলেও ওকে আমি পরাজিত করব। অর্জুন শরাঘাতে দুর্যোধনের ধনু ও হস্তাবরণ ছিন্ন করলেন এবং অশ্ব ও সারথি বিনষ্ট করলেন। দুর্যোধনকে মহাবিপদে পতিত দেখে ভূরিশ্রবা কর্ণ কৃপ শল্য প্রভৃতি সসৈন্যে এসে অর্জুনকে বেষ্টন করলেন। পাণ্ডবগণকে ডাকবার জন্য অর্জুন বার বার তাঁর ধনুতে টংকার দিলেন, কৃষ্ণও পাঞ্চজন্য বাজালেন।

 এই সময়ে দ্রোণের নিকটস্থ কৌরবযোদ্ধাদের সঙ্গে পাণ্ডবপক্ষীয় যোদ্ধাদের ঘোর যুদ্ধে হচ্ছিল। ঘটোৎকচ অলম্বুষ রাক্ষসকে বধ করলেন। পাণ্ডব