পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৩৯

 সাত্যকির পরাক্রমে ভীত হয়ে অন্যান্য যোদ্ধাদের সঙ্গে দুঃশাসন দ্রোণের কাছে চ’লে এলেন। দ্রোণ বললেন, দুঃশাসন, তোমাদের রথসকল দ্রুতবেগে চ’লে আসছে কেন? জয়দ্রথ জীবিত আছেন তো? রাজপুত্র ও মহাবীর হয়ে তুমি রণস্থল ত্যাগ করলে কেন? তুমি দ্যূতসভায় দ্রৌপদীকে বলেছিলে যে পাণ্ডবগণ ষণ্ডতিল[১] তুল্য, তবে এখন পালিয়ে এলে কেন? তোমার অভিমান দর্প আর বীরগর্জন কোথায় গেল? দ্রোণের ভর্ৎসনা শুনে দুঃশাসন আবার সাত্যকির সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলেন কিন্তু পরাজিত হয়ে প্রস্থান করলেন।

 অপরাহ্ণকালে পক্ককেশ শ্যামবর্ণ দ্রোণ আবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। তিনি পঁচাশি বৎসরের বৃদ্ধ হ’লেও ষোল বৎসরের যুবকের ন্যায় বিচরণ করতে লাগলেন। তাঁর শরাঘাতে কেকয়রাজগণের জ্যেষ্ঠ বৃহৎক্ষত্র, শিশুপালপুত্র ধৃষ্টকেতু, এবং ধৃষ্টদ্যুম্নের পুত্র ক্ষত্রধর্মা নিহত হলেন।

১৩। কর্ণের হস্তে ভীমের পরাজয় — ভূরিশ্রবা-বধ

(চতুর্দশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 কৃষ্ণার্জুনকে দেখতে না পেয়ে এবং গাণ্ডীবের শব্দ শুনতে না পেয়ে যুধিষ্ঠির উদ্‌বিগ্ন হলেন। তিনি ভীমকে বললেন, তোমার কনিষ্ঠ ভ্রাতার কোনও চিহ্ন আমি দেখতে পাচ্ছি না, কৃষ্ণও পাঞ্চজন্য বাজাচ্ছেন। নিশ্চয় ধনঞ্জয় নিহত হয়েছেন এবং কৃষ্ণ স্বয়ং যুদ্ধ করছেন। তুমি সত্বর অর্জুন আর সাত্যকির কাছে যাও। ভীম বললেন, কৃষ্ণার্জুনের কোনও ভয় নেই, তথাপি আপনার আজ্ঞা শিরোধার্য ক’রে আমি যাচ্ছি। যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা করবার ভার ধৃষ্টদ্যুম্নকে দিয়ে ভীম অর্জুনের অভিমুখে যাত্রা করলেন, পাঞ্চাল ও সোমক সৈন্যগণ তাঁর সঙ্গে গেল।

 ভীমের ললাটে লৌহবাণ দিয়ে আঘাত ক’রে দ্রোণ সহাস্যে বললেন, কুন্তীপুত্র, আজ আমি তোমার শত্রু, আমাকে পরাস্ত না ক’রে তুমি এই বাহিনী ভেদ করতে পারবে না। ভীম বললেন, ব্রহ্মবন্ধু (নীচ ব্রাহ্মণ), আপনার অনুমতি না পেয়েও অর্জুন এই বাহিনী ভেদ ক’রে গেছেন। আমি আপনার শত্রু ভীমসেন, অর্জুনের মত দয়ালু নই, আপনাকে সম্মানও করি না। এই ব’লে ভীম গদাঘাতে

  1. যে তিলের অঙ্কুর হয় না, অর্থাৎ নপুংসক।