পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৪১

কর্ণ ভীমকে বধ করলেন না, কেবল ধনুর অগ্রভাগ দিয়ে স্পর্শ ক’রে বার বার সহাস্যে বললেন, ওরে তূবরক[১] ঔদরিক সংগ্রামকাতর মূঢ়, তুমি অস্ত্রবিদ্যা জান না, আর যুদ্ধ ক’রো না। যেখানে বহুবিধ খাদ্যপানীয় থাকে সেখানেই তোমার স্থান, তুমি রণভূমির অযোগ্য। বৎস বৃকোদর, তুমি বনে গিয়ে মুনি হয়ে ফলমূল খাও গে, কিংবা গৃহে গিয়ে পাচক আর ভৃত্যদের তাড়না কর। আমার মত লোকের সঙ্গে যুদ্ধ করলে তোমাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হবে। তুমি কৃষ্ণার্জুনের কাছে যাও, কিংবা গৃহে যাও। বালক, তোমার যুদ্ধের প্রয়োজন কি? ভীম বললেন, কেন মিথ্যা গর্ব করছ, আমি তোমাকে বহুবার পরাজিত করেছি। ইন্দ্রেরও জয়-পরাজয় হয়েছিল। নীচকুলজাত কর্ণ, তুমি আমার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ কর, আমি তোমাকে কীচকের ন্যায় বিনষ্ট করব।

 এই সময়ে অর্জুন কর্ণের প্রতি শরবর্ষণ করতে লাগলেন। ভীমকে ত্যাগ ক’রে কর্ণ দুর্যোধনাদির কাছে গেলেন, ভীমও সাত্যকির রথে উঠে অর্জুনের অভিমুখে চললেন। ভূরিশ্রবা সাত্যকিকে বাধা দিতে এলেন এবং কিছু কাল ঘোর যুদ্ধের পর সাত্যকিকে ভূপাতিত ক’রে তাঁকে পদাঘাত করলেন এবং মুণ্ডচ্ছেদের উদ্দেশ্যে তাঁর কেশগুচ্ছ ধরলেন। তখন কৃষ্ণের উপদেশে অর্জুন তীক্ষ্ণ শরে ভূরিশ্রবার দক্ষিণ হস্ত কেটে ফেললেন। ভূরিশ্রবা বললেন, কৌন্তেয়, তুমি অতি নশংস কর্ম করলে, আমি অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে রত ছিলাম, সেই সময়ে আমার বাহু ছেদন করলে! এরূপ অস্ত্রপ্রয়োগ কে তোমাকে শিখিয়েছেন, ইন্দ্র রুদ্র দ্রোণ না কৃপ? তুমি কৃষ্ণের উপদেশে সাত্যকিকে বাঁচাবার জন্য এরূপ করেছ। বৃষ্ণি ও অন্ধক বংশের লোকেরা ব্রাত্য, নিন্দাহ কর্ম করাই ওদের স্বভাব, সেই বংশে জাত কৃষ্ণের কথা তুমি শুনলে কেন? এই ব’লে মহাযশা ভূরিশ্রবা বাঁ হাতে ভূমিতে শর বিছিয়ে প্রায়োপবেশনে বসলেন এবং ব্রহ্মলোকে যাবার ইচ্ছায় যোগস্থ হয়ে মহোপনিষৎ ধ্যান করতে লাগলেন। অর্জুন তাঁকে বললেন, তুমি নিরস্ত্র সাত্যকিকে বধ করতে গিয়েছিলে, নিরস্ত্র বালক অভিমন্যুকে তোমরা হত্যা করেছ, কোন্ ধার্মিক লোক এমন কর্মের প্রশংসা করেন?

 ভূরিশ্রবা ভূমিতে মস্তক স্পর্শ করলেন এবং ছিন্ন দক্ষিণ হস্ত বাম হস্তে ধ’রে অর্জুনের দিকে নিক্ষেপ করলেন। অর্জুন তাঁকে বললেন, আমার ভ্রাতাদের উপর যেমন প্রীতি, তোমার উপরেও সেইরূপ প্রীতি আছে। তুমি উশীনরপুত্র

  1. দাড়িগোঁফহীন, মাকুন্দ।