পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
মহাভারত

 যথাকালে বাসুকিভগিনীর দেবকুমার তুল্য এক পুত্র হ’ল। এই পুত্র চ্যবনতনয় প্রমতির কাছে বেদাধ্যয়ন করলেন। মহর্ষি জরৎকারু চ’লে যাবার সময় তাঁর পত্নীর গর্ভস্থ সন্তানকে লক্ষ্য ক’রে ‘অস্তি’ (আছে) বলেছিলেন সেজন্য তাঁর পুত্র আস্তীক নামে খ্যাত হলেন।

 শৌনক জিজ্ঞাসা করলেন, জনমেজয় তাঁর পিতার মৃত্যুর বৃত্তান্ত জানতে চাইলে মন্ত্রীরা তাঁকে কি বলেছিলেন?

 সৌতি বললেন, জনমেজয়ের মন্ত্রীরা এই ইতিহাস বলেছিলেন।—অভিমন্যু-উত্তরার পুত্র মহারাজ পরীক্ষিৎ কৃপাচার্যের শিষ্য এবং গোবিন্দের প্রিয় ছিলেন। ষাট বৎসর বয়স পর্যন্ত রাজত্ব করার পর দুরদৃষ্টক্রমে তাঁর প্রাণনাশ হয়। তিনি প্রপিতামহ পাণ্ডুর ন্যায় মহাবীর ও ধনুর্ধর ছিলেন। একদা পরীক্ষিৎ মৃগয়া করতে গিয়ে একটি মৃগকে বাণবিদ্ধ ক’রে তার অনুসরণ করলেন এবং পরিশ্রান্ত ও ক্ষুধিত হয়ে গহন বনে শমীক নামক এক মুনিকে দেখতে পেলেন। রাজা মৃগ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে মুনি উত্তর দিলেন না, কারণ তিনি তখন মৌনব্রতধারী ছিলেন। পরীক্ষিৎ ক্রুদ্ধ হয়ে একটা মৃত সর্প ধনুর অগ্রভাগ দিয়ে তুলে মুনির স্কন্ধে পরিয়ে দিলেন। মনি কিছুই বললেন না, ক্রোধও প্রকাশ করলেন না। রাজা তখন নিজের পুরীতে ফিরে গেলেন।

 শমীক মুনির শৃঙ্গী নামে এক তেজস্বী ক্রোধী পুত্র ছিলেন, তিনি তাঁর আচার্যের গৃহ থেকে ফেরবার সময় কৃশ নামক এক বন্ধুর কাছে শুনলেন, রাজা পরীক্ষিৎ তাঁর তপোরত পিতাকে কিরূপে অপমান করেছেন। শৃঙ্গী ক্রোধে যেন প্রদীপ্ত হয়ে এই অভিশাপ দিলেন, আমার নিরপরাধ পিতার স্কন্ধে যে মৃত সর্প দিয়েছে সেই পাপীকে সপ্ত রাত্রির মধ্যে মহাবিষধর তক্ষক নাগ দগ্ধ করবে। শৃঙ্গী তাঁর পিতার নিকট গিয়ে শাপের কথা জানালেন। শমীক বললেন, বৎস, আমরা পরীক্ষিতের রাজ্যে বাস করি, তিনি আমাদের রক্ষক, তাঁর অনিষ্ট আমি চাই না। তিনি ক্ষুধিত ও শ্রান্ত হয়ে এসেছিলেন, আমার মৌনব্রত না জেনেই এই কর্ম করেছেন। পউত্র, তাঁকে অভিশাপ দেওয়া উচিত হয়নি। শৃঙ্গী বললেন, পিতা, আমি যদি অন্যায়ও ক’রে থাকি তথাপি আমার শাপ মিথ্যা হবে না।

 গৌরমুখ নামক এক শিষ্যকে শমীক পরীক্ষিতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। গুরুর উপদেশ অনুসারে গৌরমুখ বললেন, মহারাজ, মৌনব্রতী শমীকের স্কন্ধে আপনি মৃত সর্প রেখেছিলেন, তিনি সেই অপরাধ ক্ষমা করেছেন। কিন্তু তাঁর পুত্র ক্ষমা করেন নি, তাঁর শাপে সপ্ত রাত্রির মধ্যে তক্ষক আপনার প্রাণহরণ করবে। শমীক বার বার ব’লে দিয়েছেন আপনি যেন আত্মরক্ষায় যত্নবান হন।