পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৪
মহাভারত

জয়দ্রথের প্রতি ধাবিত হলেন। ধূলি ও অন্ধকারে চতুর্দিক আচ্ছন্ন হওয়ায় যোদ্ধারা কেউ কাকেও দেখতে পেলেন না, অশ্বারোহী গজারোহী ও পদাতি সৈন্য অর্জুনের বাণে বিদারিত হয়ে পালাতে লাগল। কৃষ্ণ পুনর্বার বললেন, অর্জুন, জয়দ্রথের শিরশ্ছেদ কর, সূর্য অস্তে যাচ্ছেন। যা করতে হবে শোন।—বিখ্যাত রাজা বৃদ্ধক্ষত্র জয়দ্রথের পিতা। পুত্রের জন্মকালে তিনি এই দৈববাণী শুনেছিলেন যে রণস্থলে কোনও শত্রু এর শিরশ্ছেদন করবে। পুত্রবৎসল বৃদ্ধক্ষত্র এই অভিশাপ দিলেন — যে আমার পুত্রের মস্তক ভূমিতে ফেলবে তার মস্তক শতধা বিদীর্ণ হবে। তার পর যথাকালে জয়দ্রথকে রাজপদ দিয়ে বৃদ্ধক্ষত্র বনগমন করলেন, এখন তিনি সমন্তপঞ্চকের বাইরে দুষ্কর তপস্যা করছেন। অর্জুন, তুমি অদ্ভুতশক্তিসম্পন্ন কোনও দিব্য অস্ত্র দিয়ে জয়দ্রথের মুণ্ড কেটে বৃদ্ধক্ষত্রের ক্রোড়ে ফেল। যদি ভূমিতে ফেল তবে তোমার মস্তক বিদীর্ণ হবে।

 ওষ্ঠপ্রান্ত লেহন ক’রে অর্জুন এক মন্ত্রসিদ্ধ বজ্রতুল্য বাণ নিক্ষেপ করলেন। সেই বাণ শ্যেন পক্ষীর ন্যায় দ্রুতবেগে গিয়ে জয়দ্রথের মুণ্ড ছেদন ক’রে আকাশে উঠল। অর্জুনের আরও কতকগুলি বাণ সেই মুণ্ড ঊর্ধ্বে বহন ক’রে নিয়ে চলল, অর্জুন পুনর্বার ছয় মহারথের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। এই সময়ে ধৃতরাষ্ট্রের বৈবাহিক রাজা বৃদ্ধক্ষত্র সন্ধ্যাবন্দনা করছিলেন। সহসা কৃষ্ণকেশ ও কুণ্ডলে শোভিত জয়দ্রথের মস্তক তাঁর ক্রোড়ে পতিত হল। বধক্ষত্র ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন, তখন তাঁর পুত্রের মস্তক ভূমিতে পড়ল, তাঁর নিজের মস্তকও শতধা বিদীর্ণ হ’ল।

 তার পর কৃষ্ণ অন্ধকার অপসারিত করলেন। কৌরবগণ বুঝলেন বাসুদেবের মায়াবলে এমন হয়েছে। দুর্যোধন ও তাঁর ভ্রাতারা অশ্রুমোচন করতে লাগলেন। কৃষ্ণ অর্জুন ভীম সাত্যকি প্রভৃতি শঙ্খধ্বনি করলেন, সেই নিনাদ শুনে যুধিষ্ঠির বুঝলেন যে জয়দ্রথ নিহত হয়েছেন।

১৫। দুর্যোধনের ক্ষোভ

 দুর্যোধন বিষণ্ণমনে দ্রোণকে বললেন, আচার্য, আমাদের কিরূপে ধ্বংস হচ্ছে দেখুন। পিতামহ ভীষ্ম, মহাবীর জলসন্ধ, কাম্বোজরাজ সুদক্ষিণ, রাক্ষসরাজ অলম্বুষ, মহাবল ভূরিশ্রবা, সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ, এবং আমার অসংখ্য সৈন্য নিহত হয়েছে। আমি লোভী পাপী ধর্মনাশক, তাই আমার জয়াভিলাষী যোদ্ধারা