পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৪৫

যমালয়ে গেছেন। পাণ্ডব আর পাঞ্চালদের যুদ্ধে বধ ক’রে আমি শান্তিলাভ করব কিংবা নিজে নিহত হয়ে বীরলোকে যাব। আমি সহায়হীন, সকলে পাণ্ডবদের হিতকামনা যেমন করেন তেমন আমার করেন না। ভীষ্ম নিজেই নিজের মৃত্যুর উপায় ব’লে দিলেন, অর্জুন আপনার শিষ্য তাই আপনিও যুদ্ধে উপেক্ষা করছেন। আমার আর জীবনে প্রয়োজন নেই। পাণ্ডবগণের আচার্য, আপনি আমাকে মরণের অনুমতি দিন।

 দ্রোণ বললেন, তুমি আমাকে বাক্যবাণে পীড়িত করছ কেন? আমি সর্বদাই ব’লে থাকি যে সব্যসাচীকে জয় করা অসম্ভব। তোমরা জয়দ্রথকে রক্ষা করবার জন্য অর্জুনকে বেষ্টন করেছিলে; তুমি কর্ণ কৃপ শল্য ও অশ্বত্থামা জীবিত থাকতে জয়দ্রথ নিহত হলেন কেন? তিনি অর্জুনের হাতে নিস্তার পান নি, আমিও নিজের জীবন রক্ষার উপায় দেখছি না। আমি অত্যন্ত সন্তপ্ত হয়ে আছি, এর উপর তুমি তীক্ষ্ণ বাক্য বলছ কেন? যখন ভূরিশ্রবা আর সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ নিহত হয়েছেন তখন আর কে অবশিষ্ট থাকবে? দুর্যোধন, আমি সমস্ত পাণ্ডবসৈন্য ধ্বংস না ক’রে বর্ম খুলব না। তুমি অশ্বত্থামাকে ব’লো সে জীবিত থাকতে যেন সোমকগণ রক্ষা না পায়। তোমার বাক্যে পীড়িত হয়ে আমি শত্রুবাহিনীর মধ্যে প্রবেশ করছি; যদি পার তবে কৌরবসৈন্য রক্ষা ক’রো, আজ রাত্রিতেও যুদ্ধ হবে। এই ব’লে দ্রোণ পাণ্ডব ও সৃঞ্জয়গণের প্রতি ধাবিত হলেন।

 দুর্যোধন কর্ণকে বললেন, দ্রোণ যদি পথ ছেড়ে না দিতেন তবে অর্জুন কি ব্যূহ ভেদ করতে পারত? সে চিরকালই দ্রোণের প্রিয় তাই যুদ্ধ না ক’রেই দ্রোণ তাকে প্রবেশ করতে দিয়েছিলেন। প্রাণরক্ষার জন্য জয়দ্রথ গৃহে যেতে চেয়েছিলেন, দ্রোণ তাঁকে অভয় দিলেন, কিন্তু আমার নির্গুণতা দেখে অর্জুনকে ব্যূহদ্বার ছেড়ে দিলেন। আমরা অনার্য দুরাত্মা, তাই আমাদের সমক্ষেই আমার চিত্রসেন প্রভৃতি ভ্রাতারা ভীমের হাতে বিনষ্ট হয়েছেন।

 কর্ণ বললেন, তুমি আচার্যের নিন্দা করো না, এই ব্রাহ্মণ জীবনের আশা ত্যাগ ক’রে যথাশক্তি যুদ্ধ করছেন। তিনি স্থবির, শীঘ্রগমনে অক্ষম, বাহুচালনাতেও অশক্ত হয়েছেন। অস্ত্রবিশারদ হ’লেও তিনি পাণ্ডবদের জয় করতে পারবেন না। দুর্যোধন, আমরাও যথাশক্তি যুদ্ধ করছিলাম তথাপি সিন্ধুরাজ নিহত হয়েছেন, এজন্য মনে করি দৈবই প্রবল। আমরা পাণ্ডবদের সঙ্গে শঠতা করেছি, বিষ দিয়েছি, জতুগৃহে অগ্নি দিয়েছি, দ্যূতে পরাজিত করেছি, রাজনীতি