পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৬
মহাভারত

অনুসারে বনবাসে পাঠিয়েছি, কিন্তু দৈবের প্রভাবে সবই নিষ্ফল হয়েছে। তুমি ও পাণ্ডবরা মরণপণ করে সর্বপ্রযত্নে যুদ্ধ কর, দৈব তার নিজ মার্গেই চলবে। সৎ বা অসৎ সকল কার্যের পরিণামে দৈবই প্রবল, মানুষ নিদ্রিত থাকলেও অনন্যকর্মা দৈব জেগে থাকে।


॥ঘটোৎকচবধপর্বাধ্যায়॥

১৬। সোমদত্ত-বাহ্ণীক বধ—কৃপ-কর্ণ-অশ্বত্থামার কলহ

(চতুর্দশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 সন্ধ্যাকালে ভীরুর ত্রাসজনক এবং বীরের হর্ষবর্ধক নিদারুণ রাত্রিযুদ্ধ আরম্ভ হ’ল, পাণ্ডব পাঞ্চাল ও সঞ্জয়গণ মিলিত হয়ে দ্রোণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন।

 ভূরিশ্রবার পিতা সোমদত্ত সাত্যকিকে বললেন, তুমি ক্ষত্রধর্ম ত্যাগ ক’রে দস্যুর ধর্মে রত হ’লে কেন? বৃষ্ণিবংশে দুজন মহারথ বলে খ্যাত, প্রদ্যুম্ন ও তুমি। দক্ষিণবাহুহীন প্রায়োপবেশনে উপবিষ্ট ভূরিশ্রবাকে তুমি কেন হত্যা করলে? আমি শপথ করছি, অর্জুন যদি রক্ষা না করেন তবে এই রাত্রি অতীত না হতেই তোমাকে বধ করব নতুবা ঘোর নরকে যাব। সাত্যকির সঙ্গে যুদ্ধে আহত হয়ে সোমদত্ত মূর্ছিত হলেন, তাঁর সারথি তাঁকে সরিয়ে নিয়ে গেল।

 অশ্বত্থামার সঙ্গে ঘটোৎকচের ভীষণ যুদ্ধ হ’তে লাগল। ঘটোৎকচপুত্র অঞ্জনপর্বা অশ্বত্থামা কর্তৃক নিহত হলেন। ঘটোৎকচ বললেন, দ্রোণপুত্র, তুমি আজ আমার হাতে রক্ষা পাবে না। অশ্বত্থামা বললেন, বৎস, আমি তোমার পিতার তুল্য, তোমার উপর আমার অধিক ক্রোধ নেই। ঘটোৎকচ ক্রুদ্ধ হয়ে মায়াযুদ্ধ করতে লাগলেন। তাঁর অনুচর এক অক্ষৌহিণী রাক্ষসকে অশ্বত্থামা বিনষ্ট করলেন। সোমদত্ত আবার যুদ্ধ করতে এসে ভীমের পরিঘ ও সাত্যকির বাণের আঘাতে নিহত হলেন। সোমদত্তের পিতা বাহ্ণীকরাজ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ভীমকে আক্রমণ করলেন, গদাঘাতে ভীম তাঁকে বধ করলেন।


 দুর্যোধন কর্ণকে বললেন, মিত্রবৎসল কর্ণ, পাণ্ডবপক্ষীয় মহারথগণ আমার যোদ্ধাদের বেষ্টন করেছেন, তুমি ওঁদের রক্ষা কর। কর্ণ বললেন, আমি