পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৮
মহাভারত

বললেন, দ্বিজশ্রেষ্ঠ, দ্রোণাচার্য পুত্রের ন্যায় পাণ্ডবদের রক্ষা করেন, তুমিও তাদের উপেক্ষা ক’রে থাক। অশ্বত্থামা, প্রসন্ন হও, আমার শত্রুদের নাশ কর। অশ্বত্থামা বললেন, তোমার কথা সত্য, পাণ্ডবরা আমার ও আমার পিতার প্রিয়। আমরাও তাঁদের প্রিয়, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়। আমরা প্রাণের ভয় ত্যাগ ক’রে যথাশক্তি যুদ্ধ করি।

 দুর্যোধনকে আশ্বস্ত ক’রে অশ্বত্থামা রণস্থলে গেলেন এবং বিপক্ষ যোদ্ধৃগণকে নিপীড়িত করতে লাগলেন।

১৭। কৃষ্ণার্জুন ও ঘটোৎকচ

(চতুর্দশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 গাঢ় অন্ধকারে বিমূঢ় হয়ে সৈন্যরা পরস্পরকে বধ করছে দেখে দুর্যোধন তাঁর পদাতিদের বললেন, তোমরা অস্ত্র ত্যাগ ক’রে হাতে জলন্ত প্রদীপ নাও। পদাতিরা প্রদীপ ধরলে যুদ্ধভূমির অন্ধকার দূর হ’ল। পাণ্ডবরাও পদাতি সৈন্যের হাতে প্রদীপ দিলেন। প্রত্যেক হস্তীর পৃষ্ঠে সাত, রথে দশ, অশ্বে দুই, এবং সেনার পার্শ্বে পশ্চাতে ও ধ্বজেও প্রদীপ দেওয়া হ’ল।

 সেই নিদারুণ রাত্রিযুদ্ধে এক বার পাণ্ডবপক্ষের অন্য বার কৌরবপক্ষের জয় হ’তে লাগল। স্বয়ংবরসভায় যেমন বিবাহার্থীদের নাম ঘোষিত হয় সেইরূপ রাজারা নিজ নিজ নাম ও গোত্র শুনিয়ে বিপক্ষকে প্রহার করতে লাগলেন। অর্জুনের প্রবল শরবর্ষণে কৌরবসৈন্য ভয়ার্ত হয়ে পালাচ্ছে দেখে দুর্যোধন দ্রোণ ও কর্ণকে বললেন, অর্জুন জয়দ্রথকে বধ করেছে সেজন্য ক্রুদ্ধ হয়ে আপনারাই রাত্রিকালে এই যুদ্ধ আরম্ভ করেছেন। পাণ্ডবসৈন্য আমাদের সৈন্য সংহার করছে, আর আপনারা অক্ষমের ন্যায় তা দেখছেন। হে মাননীয় বীরদ্বয়, যদি আমাকে ত্যাগ করাই আপনাদের ইচ্ছা ছিল তবে আমাকে আশ্বাস দেওয়া আপনাদের উচিত হয় নি। আপনাদের অভিপ্রায় জানলে এই সৈন্যক্ষয়কর যুদ্ধ আরম্ভ করতাম না। যদি আমাকে ত্যাগ করতে না চান তবে যুদ্ধে আপনাদের বিক্রম প্রকাশ করুন। দুর্যোধনের বাক্যরূপ কশাঘাতে দ্রোণ ও কর্ণ পদাহত সর্পের ন্যায় উত্তেজিত হয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন।

 কর্ণের শরবর্ষণে আকুল হয়ে পাণ্ডবসৈন্য পালাচ্ছে দেখে যুধিষ্ঠির