পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৪৯

অর্জুনকে বললেন, আমাদের যোদ্ধারা অনাথের ন্যায় বন্ধুদের ডাকছে, কর্ণের শরসন্ধান আর শরত্যাগের মধ্যে কোনও অবকাশ দেখা যাচ্ছে না, নিশ্চয় আজ ইনি আমাদের সংহার করবেন। ধনঞ্জয়, কর্ণের বধের জন্য যা করা উচিত তা কর। অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, আমাদের রথীরা পালাচ্ছেন আর কর্ণ নির্ভয়ে তাঁদের শরাঘাত করছেন, এ আমি সইতে পারছি না। মধুসূদন, শীঘ্র কর্ণের কাছে রথ নিয়ে চল, হয় আমি তাঁকে মারব না হয় তিনি আমাকে মারবেন।

 কৃষ্ণ বললেন, তুমি অথবা রাক্ষস ঘটোৎকচ ভিন্ন আর কেউ কর্ণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না। এখন তাঁর সঙ্গে তোমার যুদ্ধ করা আমি উচিত মনে করি না, কারণ তাঁর কাছে ইন্দ্রদত্ত শক্তি অস্ত্র আছে, তোমাকে মারবার জন্য কর্ণ এই ভয়ংকর অস্ত্র সর্বদা সঙ্গে রাখেন। অতএব ঘটোৎকচই তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করুক। ভীমসেনের এই পুত্রের কাছে দৈব রাক্ষস ও আসুর সর্বপ্রকার অস্ত্রই রয়েছে, সে কর্ণকে জয় করবে তাতে আমার সংশয় নেই।

 কৃষ্ণের আহ্বান শুনে দীপ্তকুণ্ডলধারী সশস্ত্র মেঘবর্ণ ঘটোৎকচ এসে অভিবাদন করলেন। কৃষ্ণ সহাস্যে বললেন, পুত্র ঘটোৎকচ, এখন একমাত্র তোমারই বিক্রমপ্রকাশের সময় উপস্থিত হয়েছে। তোমার আত্মীয়গণ বিপৎসাগরে নিমগ্ন হয়েছেন, তুমি তাঁদের রক্ষা কর। কর্ণ পাণ্ডবসৈন্য নিপীড়িত করছেন, ক্ষত্রিয় বীরগণকে হনন করছেন, এই নিশীথকালে পাঞ্চালরা সিংহের ভয়ে মৃগের ন্যায় পালিয়ে যাচ্ছে। তোমার নানাবিধ অস্ত্র ও রাক্ষসী মায়া আছে, আর রাক্ষসগণ রাত্রিতেই অধিক বলবান হয়।

 অর্জুন বললেন, ঘটোৎকচ, আমি মনে করি সর্বসৈন্যমধ্যে তুমি, সাত্যকি আর ভীমসেন এই তিন জনই শ্রেষ্ঠ। তুমি এই রাত্রিতে কর্ণের সঙ্গে দ্বৈরথ যুদ্ধ কর, সাত্যকি তোমার পৃষ্ঠরক্ষক হবেন।

 ঘটোৎকচ বললেন, নরশ্রেষ্ঠ, আমি একাকীই কর্ণ দ্রোণ এবং অন্য ক্ষত্রিয় বীরগণকে জয় করতে পারি। আমি এমন যুদ্ধ করব যে লোকে চিরকাল তার কথা বলবে। কোনও বীরকে আমি ছাড়ব না, ভয়ে কৃতাঞ্জলি হ’লেও নয়, রাক্ষসধর্ম অনুসারে সকলকেই বধ করব। এই ব’লে ঘটোৎকচ কর্ণের দিকে ধাবিত হলেন।