পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৫০
মহাভারত

১৮। ঘটোৎকচবধ

(চতুর্দশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 ঘটোৎকচের দেহ বিশাল, চক্ষু লোহিত, শ্মশ্রু পিঙ্গল, মুখ আকর্ণবিস্তৃত, দন্ত করাল, অঙ্গ নীলবর্ণ, মস্তক বৃহৎ, তার উপরে বিকট কেশচূড়া। তাঁর দেহে কাংস্যনির্মিত উজ্জ্বল বর্ম, মস্তকে শুভ্র কিরীট, কর্ণে অরুণবর্ণ কুণ্ডল। তাঁর বৃহৎ রথ ভল্লুকচর্মে আচ্ছাদিত এবং শত অশ্বে বাহিত। সেই রথের আকাশস্পর্শী ধ্বজের উপর এক ভীষণ মাংসাশী গৃধ্র বসে আছে।

 কর্ণ ও ঘটোৎকচ শরক্ষেপণ করতে করতে পরস্পরের দিকে ধাবিত হলেন। কিছুক্ষণ পরে ঘটোৎকচ মায়াযুদ্ধ আরম্ভ করলেন। ঘোরদর্শন রাক্ষস সৈন্য আবির্ভূত হয়ে শিলা লৌহচক্র তোমর শূল শতঘ্নী পট্টিশ প্রভৃতি বর্ষণ করতে লাগল, কৌরব যোদ্ধারা ভীত হয়ে পশ্চাৎপদ হলেন, কেবল কর্ণ অবিচলিত থেকে বাণবর্ষণ করতে লাগলেন। শরবিদ্ধ হয়ে ঘটোৎকচের দেহ শজারুর ন্যায় কণ্টকিত হ’ল। একবার দৃশ্য হয়ে, আবার অদৃশ্য হয়ে, কখনও আকাশে উঠে, কখনও ভূমি বিদীর্ণ ক’রে ঘটোৎকচ যুদ্ধ করতে লাগলেন। সহসা তিনি নিজেকে বহু রূপে বিভক্ত করলেন, সিংহ ব্যাঘ্র তরক্ষু সর্প, তীক্ষ্ণচঞ্চু পক্ষী, রাক্ষস পিশাচ কুক্কুর বৃক প্রভৃতি আবির্ভূত হয়ে কর্ণকে ভক্ষণ করতে গেল। শরাঘাতে কর্ণ তাদের একে একে বধ করলেন।

 অলায়ুধ নামে এক রাক্ষস দুর্যোধনের কাছে এসে বললে, মহারাজ, হিড়িম্ব বক ও কির্মীর আমার বন্ধু ছিলেন, ভীম তাঁদের বধ করেছে, কন্যা হিড়িম্বাকে ধর্ষণ করেছে। আমি আজ কৃষ্ণ ও পাণ্ডবগণকে সসৈন্যে হত্যা করে ভক্ষণ করব। দুর্যোধনের অনুমতি পেয়ে অলায়ুধ ভীমের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল। ঘটোৎকচ তার মুণ্ড কেটে দুর্যোধনের দিকে নিক্ষেপ করলেন। তাঁর মায়াসৃষ্ট রাক্ষসগণ অগণিত সৈন্য বধ করতে লাগল। কুরুবীরগণ রণে ভঙ্গ দিয়ে বললেন, কৌরবগণ, পালাও, ইন্দ্রাদি দেবতারা পাণ্ডবদের জন্য আমাদের বধ করছেন।

 চক্রযুক্ত একটি শতঘ্নী নিক্ষেপ করে ঘটোৎকচ কর্ণের চার অশ্ব বধ করলেন। কৌরবগণ সকলে কর্ণকে বললেন, তুমি শীঘ্র শক্তি অস্ত্রে এই রাক্ষসকে বধ কর, নতুবা আমরা সসৈন্যে বিনষ্ট হব। কর্ণ দেখলেন, ঘটোৎকচ সৈন্যসংহার করছেন, কৌরবগণ ত্রস্ত হয়ে আর্তনাদ করছেন। তখন তিনি ইন্দ্রপ্রদত্ত বৈজয়ন্তী