পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৫১

শক্তি নিলেন। অর্জুনকে বধ করবার জন্য কর্ণ বহু বৎসর এই অস্ত্র সযত্নে রেখেছিলেন। এখন তিনি কৃতান্তের জিহ্বার ন্যায় লেলিহান, উল্কার ন্যায় দীপ্যমান, মৃত্যুর ভগিনীর ন্যায় ভীষণ সেই শক্তি ঘটোৎকচের প্রতি নিক্ষেপ করলেন। ঘটোৎকচ ভীত হয়ে নিজের দেহ বিন্ধ্য পর্বতের ন্যায় বৃহৎ ক’রে বেগে পিছনে স’রে গেলেন। কর্ণের হস্তনিক্ষিপ্ত শক্তি ঘটোৎকচের সমস্ত মায়া ভস্ম ক’রে এবং তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ ক’রে আকাশে নক্ষত্রগণের মধ্যে চ’লে গেল। মরণকালে ঘটোৎকচ আর এক আশ্চর্য কার্য করলেন। তিনি পর্বত ও মেঘের ন্যায় বিশাল দেহ ধারণ ক’রে আকাশ থেকে পতিত হলেন; তাঁর প্রাণহীন দেহের ভারে কৌরববাহিনীর এক অংশ নিষ্পেষিত হ’ল।

 কৌরবগণ হৃষ্ট হয়ে সিংহনাদ ও বাদ্যধধ্বনি করতে লাগলেন, কর্ণ বৃত্রহন্তা ইন্দ্রের ন্যায় পূজিত হলেন।


 ঘটোৎকচের মৃত্যুতে পাণ্ডবগণ শোকে অশ্রুমোচন করতে লাগলেন, কিন্তু কৃষ্ণ হৃষ্ট হয়ে সিংহনাদ ক’রে অর্জুনকে আলিঙ্গন করলেন। তিনি অশ্বের রশ্মি সংযত ক’রে রথের উপর নৃত্য করতে লাগলেন এবং বার বার তাল ঠুকে গর্জন করলেন। অর্জুন অপ্রীত হয়ে বললেন, মধুসূদন, আমরা শোকগ্রস্ত হয়েছি, তুমি অসময়ে হর্ষ প্রকাশ করছ। তোমার এই অধীরতার কারণ কি?

 কৃষ্ণ বললেন, আজ কর্ণ ঘটোৎকচের উপর শক্তি নিক্ষেপ করেছেন, তার ফলে তিনি নিজেই যুদ্ধে নিহত হবেন। ভাগ্যক্রমে কর্ণের অক্ষয় কবচ আর কুণ্ডল দূর হয়েছে, ভাগ্যক্রমে ইন্দ্রদত্ত অমোঘ শক্তিও ঘটোৎকচকে মেরে অপসৃত হয়েছে। অর্জুন, তোমার হিতের জন্যই আমি জরাসন্ধ শিশুপাল আর একলব্যকে একে একে নিহত করিয়েছি, হিড়িম্ব কির্মীর বক অলায়ুধ এবং উগ্রকর্মা ঘটোৎকচকেও নিপাতিত করিয়েছি। অর্জুন বললেন, আমার হিতের জন্য কেন? কৃষ্ণ উত্তর দিলেন, জরাসন্ধ শিশুপাল আর একলব্য না মরলে এখন ভয়ের কারণ হতেন, দুর্যোধন নিশ্চয় তাঁদের বরণ করতেন এবং তাঁরাও এই যুদ্ধে কুরু পক্ষে যেতেন। নরশ্রেষ্ঠ, তোমার সহায়তায় দেবদ্বেষীদের বিনাশ এবং জগতের হিতসাধনের জন্য আমি জন্মেছি। হিড়িম্ব বক আর কির্মীরকে ভীমসেন মেরেছেন, ঘটোৎকচ অলায়ুধকে মেরেছে, কর্ণ ঘটোৎকচের উপর শক্তি নিক্ষেপ করেছেন। কর্ণ যদি বধ না করতেন তবে আমিই ঘটোৎকচকে বধ করতাম, কিন্তু তোমাদের প্রীতির জন্য তা করি নি। এই রাক্ষস ব্রাহ্মণদ্বেষী যজ্ঞদ্বেষী ধর্মনাশক পাপাত্মা, সেজন্যই