পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৫২
মহাভারত

কৌশলে তাকে নিপাতিত করিয়েছি, ইন্দ্রের শক্তিও ব্যয়িত করিয়েছি। আমিই কর্ণকে বিমোহিত করেছিলাম, তাই তিনি তোমার জন্য রক্ষিত শক্তি ঘটোৎকচের উপর নিক্ষেপ করেছেন।

 ঘটোৎকচের মৃত্যুতে যুধিষ্ঠির কাতর হয়েছেন দেখে কৃষ্ণ বললেন, ভরতশ্রেষ্ঠ, আপনি শোক করবেন না, এরূপ বিহ্বলতা আপনার যোগ্য নয়। আপনি উঠুন, যুদ্ধ করুন, গুরুভার বহন করুন। আপনি শোকাকুল হ’লে আমাদের জয়লাভ সংশয়ের বিষয় হবে। যুধিষ্ঠির হাত দিয়ে চোখ মুছে বললেন, মহাবাহু, যে লোক উপকার মনে রাখে না তার ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়। আমাদের বনবাসকালে ঘটোৎকচ বালক হ’লেও বহু সাহায্য করেছিল। অর্জুনের অনুপস্থিতিকালে সে কাম্যক বনে আমাদের কাছে ছিল, যখন আমরা গন্ধমাদন পর্বতে যাই তখন তার সাহায্যেই আমরা অনেক দুর্গম স্থান পার হ’তে পেরেছিলাম, পরিশ্রান্তা পাঞ্চালীকেও সে পৃষ্ঠে বহন করেছিল। এই যুদ্ধে সে আমার জন্য বহু দুঃসাধ্য কর্ম করেছে। সে আমার ভক্ত ও প্রিয় ছিল, তার জন্য আমি শোকার্ত হয়েছি। জনার্দন, তুমি ও আমরা জীবিত থাকতে এবং অর্জুনের সমক্ষে ঘটোৎকচ কেন কর্ণের হাতে নিহত হ’ল? অর্জুন অল্প কারণে জয়দ্রথকে বধ করেছেন, তাতে আমি বিশেষ প্রীত হই নি। যদি শত্রুবধ করাই ন্যায্য হয় তবে আগে দ্রোণ ও কর্ণকেই বধ করা উচিত, এঁরাই আমাদের দুঃখের মূল। যেখানে দ্রোণ আর কর্ণকে মারা উচিত সেখানে অর্জুন জয়দ্রথকে মেরেছেন। মহাবাহু ভীমসেন এখন দ্রোণের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, আমি নিজেই কর্ণকে বধ করতে যাব।

 যুধিষ্ঠির বেগে কর্ণের দিকে যাচ্ছিলেন এমন সময় ব্যাসদেব এসে তাঁকে বললেন, যুধিষ্ঠির, ভাগ্যক্রমে অর্জুন কর্ণের সঙ্গে দ্বৈরথ যুদ্ধ করেন নি তাই তিনি ইন্দ্রদত্ত শক্তির প্রহার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ঘটোৎকচ নিহত হওয়ায় অর্জুন রক্ষা পেয়েছেন। বৎস, ঘটোৎকচের জন্য শোক ক’রো না, তুমি ভ্রাতাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে যুদ্ধ কর। আর পাঁচ দিন পরে তুমি পৃথিবীর অধিপতি হবে। তুমি সর্বদা ধর্মের চিন্তা কর, যেখানে ধর্ম সেখানেই জয় হয়। এই ব’লে ব্যাস অন্তর্হিত হলেন।