পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপৰ্ব
৪৫৩

॥দ্রোণবধপর্বাধ্যায়॥

১৯। দ্রুপদ-বিরাট-বধ—দুর্যোধনের বাল্যস্মৃতি

(পঞ্চদশ দিনের যুদ্ধ)

 সেই ভয়ংকর রাত্রির অর্ধভাগ অতীত হ’লে সৈন্যরা পরিশ্রান্ত ও নিদ্রাতুর হয়ে পড়ল। অনেকে অস্ত্র ত্যাগ ক’রে হস্তী ও অশ্বের পৃষ্ঠে নিদ্রিত হ’ল, অনেকে নিদ্রান্ধ হয়ে শত্রু মনে ক’রে স্বপক্ষকেই বধ করতে লাগল। তাদের এই অবস্থা দেখে অর্জুন সর্ব দিক নিনাদিত ক’রে উচ্চস্বরে বললেন, সৈন্যগণ, রণভূমি ধূলি ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়েছে, তোমাদের বাহন এবং তোমরা শ্রান্ত ও নিদ্রান্ধ হয়েছ, যদি ইচ্ছা কর তবে এই রণভূমিতে কিছু কাল নিদ্রা যাও। চন্দ্রোদয় হ’লে কুরুপাণ্ডবগণ বিশ্রামের পর আবার যুদ্ধ করবে। অর্জুনের এই কথা শুনে কৌরবসৈন্যরা চিৎকার করে বললে, কর্ণ, কর্ণ, রাজা দুর্যোধন, পাণ্ডবসেনা যুদ্ধে বিরত হয়েছে, আপনারাও বিরত হ’ন। তখন দুই পক্ষই যুদ্ধে নিবৃত্ত হয়ে অর্জুনের প্রশংসা করতে লাগল। সমস্ত সৈন্য নিদ্রামগ্ন হওয়ায় বোধ হ’ল যেন কোনও নিপুণ চিত্রকর পটের উপর তাদের চিত্রিত করেছে।

 কিছু কাল পরে মহাদেবের বৃষভের ন্যায়, মদনের শরাসনের ন্যায়, নববধূর ঈষৎ হাস্যের ন্যায় শ্বেতবর্ণ মনোহর চন্দ্র ক্রমশ উদিত হলেন। তখন অন্ধকার দূর হ’ল, সৈন্যগণ নিদ্রা থেকে উঠে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হ’ল।

 দুর্যোধন দ্রোণকে বললেন, আমাদের শত্রুরা যখন শ্রান্ত ও অবসন্ন হয়ে বিশ্রাম করছিল তখন আমরা তাদের লক্ষ্য রূপে পেয়েছিলাম। তারা ক্ষমার যোগ্য না হ’লেও আপনার প্রিয়কামনায় তাদের ক্ষমা করেছি। পাণ্ডবরা এখন বিশ্রাম ক’রে বলবান হয়েছে। আমাদের তেজ ও শক্তি ক্রমশই কমছে, কিন্তু আপনার প্রশ্রয় পেয়ে পাণ্ডবদের ক্রমশ বলবৃদ্ধি হচ্ছে। আপনি সর্বাস্ত্রবিৎ, দিব্য অস্ত্রে ত্রিভুবন সংহার করতে পারেন, কিন্তু পাণ্ডবগণকে শিষ্য জ্ঞান করে অথবা আমার দুর্ভাগ্যক্রমে আপনি তাদের ক্ষমা করে আসছেন। দ্রোণ বললেন, আমি স্থবির হয়েও যথাশক্তি যুদ্ধ করছি, অতঃপর, বিজয়লাভের জন্য হীন কার্যও করব, ভাল হ’ক মন্দ হ’ক তুমি যা চাও তাই আমি করব। আমি শপথ করছি, যুদ্ধে সমস্ত পাঞ্চাল বধ না ক’রে আমার বর্ম খুলব না।

 রাত্রির তিন মুহূর্ত অবশিষ্ট থাকতে পুনর্বার যুদ্ধ আরম্ভ হ’ল।