পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৫৪
মহাভারত

দ্রোণ কোরবসেনা দুই ভাগে বিভক্ত করলেন এবং এক ভাগ নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। ক্রমশ অরুণোদয়ে চন্দ্রের প্রভা ক্ষীণ হ’ল। বিরাট ও দ্রুপদ সসৈন্যে দ্রোণকে আক্রমণ করলেন। দ্রোণের শরাঘাতে দ্রুপদের তিন পৌত্র নিহত হলেন। চেদি কেকয় সৃঞ্জয় ও মৎস্য সৈন্যগণ পরাভূত হ’ল। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর দ্রোণ ভল্লের আঘাতে দ্রুপদ ও বিরাটকে বধ করলেন।

 ভীমসেন উগ্রবাক্যে ধৃষ্টদ্যুম্নকে বললেন, কোন্ ক্ষত্রিয় দ্রুপদের বংশে জন্মগ্রহণ ক’রে এবং সর্বাস্ত্রবিশারদ হয়ে শত্রুকে দেখেও উপেক্ষা করে? কোন্ পুরুষ রাজসভায় শপথ ক’রে পিতা ও পুত্রগণের হত্যা দেখেও শত্রুকে পরিত্যাগ করে? এই ব’লে ভীম শরক্ষেপণ করতে করতে দ্রোণসৈন্যের মধ্যে প্রবেশ করলেন। ধৃষ্টদ্যুম্নও তাঁর অনুসরণ করলেন।

 কিছুক্ষণ পরে সূর্যোদয় হ’ল। যোদ্ধারা বর্মাবৃতদেহে সহস্রাংশু আদিত্যের উপাসনা করলেন, তার পর আবার যুদ্ধ করতে লাগলেন! সাত্যকিকে দেখে দুর্যোধন বললেন, সখা, ক্রোধ লোভ ক্ষত্রিয়াচার ও পৌরুষকে ধিক—আমরা পরস্পরের প্রতি শরসন্ধান করছি! বাল্যকালে আমরা পরস্পরের প্রাণ অপেক্ষা প্রিয় ছিলাম, এখন এই রণস্থলে সে সমস্তই জীর্ণ হয়ে গেছে। সাত্যকি, আমাদের সেই বাল্যকালের খেলা কোথায় গেল, এই যুদ্ধেই বা কেন হ’ল? যে ধনের লোভে আমরা যুদ্ধ করছি তা নিয়ে আমরা কি করব? সাত্যকি সহাস্যে উত্তর দিলেন, রাজপুত্র, আমর। যেখানে একসঙ্গে খেলতাম এ সেই সভামণ্ডপ নয়, আচার্যের গৃহও নয়। ক্ষত্রিয়দের স্বভাবই এই, তারা গুরুজনকেও বধ করে। যদি আমি তোমার প্রিয় হই তবে শীঘ্র আমাকে বধ কর, যাতে আমি পুণ্যলোকে যেতে পারি, মিত্রদের এই ঘোর বিপদ দেখতে আমি আর ইচ্ছা করি না। এই ব’লে সাত্যকি দুর্যোধনের প্রতি ধাবিত হলেন এবং সিংহ ও হস্তীর ন্যায় দুজনে যুদ্ধে রত হলেন।

২০। দ্রোণের ব্রহ্মলোকে প্রয়াণ

(পঞ্চদশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 দ্রোণের শরবৃষ্টিতে পাণ্ডবসেনা নিরন্তর নিহত হচ্ছে দেখে কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, হাতে ধনুর্বাণ থাকলে দ্রোণ ইন্দ্রাদি দেবগণেরও অজেয়, কিন্তু যদি অস্ত্র ত্যাগ করেন তবে মানুষও ওঁকে বধ করতে পারে। তোমরা এখন ধর্মের দিকে