পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৫৫

দৃষ্টি না দিয়ে জয়ের উপায় স্থির কর, নতুবা দ্রোণই তোমাদের সকলকে বধ করবেন। আমার মনে হয়, অশ্বত্থামার মৃত্যুসংবাদ পেলে উনি আর যুদ্ধ করবেন না, অতএব কেউ ওঁকে বলুক যে অশ্বত্থামা যুদ্ধে হত হয়েছেন।

 কৃষ্ণের এই প্রস্তাব অর্জনের রুচিকর হ’ল না, কিন্তু আর সকলেই এতে মত দিলেন, যুধিষ্ঠিরও নিতান্ত অনিচ্ছায় সম্মত হলেন। মালবরাজ ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামে এক হস্তী ছিল। ভীম তাকে গদাঘাতে বধ করলেন এবং দ্রোণের কাছে গিয়ে লজ্জিতভাবে উচ্চস্বরে বললেন, অশ্বত্থামা হত হয়েছে। বালুকাময় তটভূমি যেমন জলে গলিত হয়, ভীমসেনের অপ্রিয় বাক্য শুনে সেইরূপ দ্রোণের অঙ্গ অবসন্ন হ’ল। কিন্তু তিনি পুত্রের বীরত্ব জানতেন, সেজন্য ভীমের কথায় অধীর হলেন না, ধৃষ্টদ্যুম্নের উপর তীক্ষ্ণ বাণ ক্ষেপণ করতে লাগলেন। ধৃষ্টদ্যুম্নের রথ ও সমস্ত অস্ত্র বিনষ্ট হ’ল, তখন ভীম তাঁকে নিজের রথে তুলে নিয়ে বললেন, তুমি ভিন্ন আর কেউ আচার্যকে বধ করতে পারবে না, তোমার উপরেই এই ভার আছে, শীঘ্র ওঁকে মারবার চেষ্টা কর।

 দ্রোণ ক্রুদ্ধ হয়ে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করলেন। বিশ হাজার পাঞ্চাল রথী, পাঁচ শ মৎস্য সৈন্য, ছ হাজার সৃঞ্জয় সৈন্য, দশ হাজার হস্তী এবং দশ হাজার অশ্ব নিপাতিত হ’ল। এই সময়ে বিশ্বামিত্র জমদগ্নি ভরদ্বাজ গৌতম বশিষ্ঠ প্রভৃতি মহর্ষিগণ অগ্নিদেবকে পুরোবর্তী ক’রে সূক্ষ্মদেহে উপস্থিত হলেন। তাঁরা বললেন, দ্রোণ, তুমি অধর্মযুদ্ধ করছ, তোমার মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়েছে। তুমি বেদবেদাঙ্গবিৎ সত্যধর্মে নিরত ব্রাহ্মণ, এরূপ ক্রূর কর্ম করা তোমার উচিত নয়। যারা ব্রহ্মাস্ত্রে অনভিজ্ঞ এমন লোককে তুমি ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে মারছ, এই পাপকর্ম আর ক’রো না, শীঘ্র অস্ত্র ত্যাগ কর।

 যুদ্ধে বিরত হয়ে দ্রোণ বিষণ্ণমনে যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা করলেন, অশ্বত্থামা হত হয়েছেন কিনা। দ্রোণের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে ত্রিলোকের ঐশ্বর্যের জন্যও যুধিষ্ঠির মিথ্যা বলবেন না। কৃষ্ণ উদ্‌বিগ্ন হয়ে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, দ্রোণ যদি আর অর্ধ দিন যুদ্ধ করেন তবে আপনার সমস্ত সৈন্য বিনষ্ট হবে। আমাদের রক্ষার জন্য এখন আপনি সত্য না ব’লে মিথ্যাই বলুন, জীবনরক্ষার জন্য মিথ্যা বললে পাপ হয় না। ভীম বললেন, মালবরাজ ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামে এক হস্তী ছিল, সে আমাদের সৈন্য মথিত করছিল সেজন্য তাকে আমি বধ করেছি। তার পর আমি দ্রোণকে বললাম, ভগবান, অশ্বত্থামা হত হয়েছেন, আপনি যুদ্ধ থেকে বিরত হ’ন; কিন্তু উনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। মহারাজ, আপনি