পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৫৭

অন্তর্হিত হ’ল। দ্রোণের এই ব্রহ্মলোকযাত্রা কেবল পাঁচজন দেখতে পেলেন— কৃষ্ণ কৃপ যুধিষ্ঠির অর্জুন ও সঞ্জয়।

 দ্রোণ রক্তাক্তদেহে নিরস্ত্র হয়ে রথে ব’সে আছেন দেখে ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁর প্রতি ধাবিত হলেন। ‘দ্রুপদপুত্র, আচার্যকে জীবিত ধ’রে আন, বধ ক’রো না’—উচ্চস্বরে এই ব’লে অর্জুন তাঁকে নিবারণ করতে গেলেন; তথাপি ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রাণহীন দ্রোণের কেশ গ্রহণ ক’রে শিরশ্ছেদ করলেন এবং খড়্‌গ ঘূর্ণিত ক’রে সিংহনাদ করতে লাগলেন। তার পর তিনি দ্রোণের মুণ্ড তুলে নিয়ে কৌরব সৈন্যগণের সম্মুখে নিক্ষেপ করলেন।

 দ্রোণের মৃত্যুর পর কৌরবসৈন্য ভগ্ন হ’ল। কুরপক্ষের রাজারা দ্রোণের দেহের জন্য রণস্থলে অন্বেষণ করলেন, কিন্তু বহু কবন্ধের মধ্যে তা দেখতে পেলেন না। ধৃষ্টদ্যুম্নকে আলিঙ্গন ক’রে ভীম বললেন, সূতপুত্র কর্ণ আর পাপী দুর্যোধন নিহত হ’লে আবার তোমাকে আলিঙ্গন করব। এই ব’লে ভীম হৃষ্টচিত্তে তাল ঠুকে পৃথিবী কম্পিত করতে লাগলেন।


॥নারায়ণাস্ত্রমোক্ষপর্বাধ্যায়॥

২১। অশ্বত্থামার সংকল্প—ধৃষ্টদ্যুম্ন-সাত্যকির কলহ

 দ্রোণের মৃত্যুর পর কৌরবগণ ভীত হয়ে পালাতে লাগলেন। কর্ণ শল্য কৃপ দুর্যোধন দুঃশাসন প্রভৃতি রণস্থল থেকে চ’লে এলেন। অশ্বত্থামা তখনও শিখণ্ডী প্রভৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। কৌরবসৈন্যের ভঙ্গ দেখে তিনি দুর্যোধনের কাছে এসে বললেন, রাজা, তোমার সৈন্য পালাচ্ছে কেন? তোমাকে এবং কর্ণ প্রভৃতিকে প্রকৃতিস্থ দেখছি না, কোন্ মহারথ নিহত হয়েছেন? দুর্যোধন অশ্বত্থামার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না, তাঁর চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হ’ল। তখন কৃপাচার্য দ্রোণের মৃত্যুর বৃত্তান্ত জানালেন। অশ্বত্থামা বার বার চক্ষু মুছে ক্রোধে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমার পিতা অস্ত্র ত্যাগ করার পর নীচাশয় পাণ্ডবগণ যে ভাবে তাঁকে বধ করেছে এবং ধর্মধ্বজী নৃশংস অনার্য যুধিষ্ঠির যে পাপকর্ম করেছে তা শুনলাম। যুদ্ধে নিহত হওয়া দুঃখজনক নয়, কিন্তু সকল সৈন্যের সমক্ষে পিতার কেশাকর্ষণ করা হয়েছে এতেই আমি মর্মান্তিক কষ্ট পাচ্ছি। নৃশংস দুরাত্মা ধৃষ্টদ্যুম্ন শীঘ্রই এর দারুণ প্রতিফল পাবে। যে