পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৫৯

 ভীমসেন ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, অর্জুন, তুমি অরণ্যবাসী ব্রতধারী মুনির ন্যায় ধর্ম কথা বলছ। কৌরবগণ অধর্ম অনুসারে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের রাজ্য হরণ করেছে, দ্রৌপদীর কৈশাকর্ষণ করেছে, আমাদের তের বৎসর নির্বাসিত করেছে; এখন আমরা সেইসকল দুষ্কার্যের প্রতিশোধ নিচ্ছি। তুমি ক্ষত্রধর্ম না বুঝে আমাদের ক্ষতস্থানে ক্ষার দিচ্ছ। তোমরা চার ভ্রাতা না হয় যুদ্ধ ক’রো না, আমি একাই গদাহস্তে অশ্বত্থামাকে জয় করব।

 ধৃষ্টদ্যুম্ন অর্জুনকে বললেন, ব্রাহ্মণদের কার্য যজন যাজন অধ্যয়ন অধ্যাপন দান ও প্রতিগ্রহ। দ্রোণ তার কি করেছেন? তিনি স্বধর্ম ত্যাগ করে ক্ষত্রিয়বৃত্তি নিয়ে অলৌকিক অস্ত্রে আমাদের ধ্বংস করছিলেন। সেই নীচ ব্রাহ্মণকে যদি আমরা কুটিল উপায়ে বধ করে থাকি তবে কি অন্যায় হয়েছে? দ্রোণকে মারবার জন্যই যজ্ঞাগ্নি থেকে দ্রুপদপুত্ররূপে আমার উৎপত্তি। সেই নৃশংসকে আমি নিপাতিত করেছি, তার জন্য আমাকে অভিনন্দন করছ না কেন? তুমি জয়দ্রথের মুণ্ড নিষাদের দেশে নিক্ষেপ করেছিলে, কিন্তু আমি দ্রোণের মুখ সেরূপে নিক্ষেপ করি নি, এই আমার দুঃখ। ভীষ্মকে বধ করলে যদি অধর্ম না হয় তবে দ্রোণের বধে অধর্ম হবে কেন? অর্জুন, জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব মিথ্যাবাদী নন, আমিও অধার্মিক নই, আমরা শিষ্যদ্রোহী পাপীকেই মেরেছি।

 ধৃষ্টদ্যুম্নের কথা শুনে অর্জুন বললেন, ধিক ধিক! যুধিষ্ঠিরাদি, কৃষ্ণ, এবং আর সকলে লজ্জিত হলেন। সাত্যকি বললেন, এখানে কি এমন কেউ নেই যে এই অকল্যাণভাষী নরাধম ধৃষ্টদ্যুম্নকে বধ করে? ক্ষুদ্রমতি, তোমার জিহ্বা আর মস্তক বিদীর্ণ হচ্ছে না কেন? কুলাঙ্গার, গুরুহত্যা করে তোমার ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন সাত পুরুষকে তুমি নরকস্থ করেছ। ভীষ্ম নিজেই নিজের মৃত্যুর উপায় ব’লে দিয়েছিলেন, এবং তোমার ভ্রাতা শিখণ্ডীই তাঁকে বধ করেছে। তুমি যদি আবার এপ্রকার কথা বল তবে গদাঘাতে তোমার মস্তক চূর্ণ করব।

 সাত্যকির ভর্ৎসনা শুনে ধৃষ্টদ্যুম্ন হেসে বললেন, তোমার কথা শুনেছি শুনেছি, ক্ষমাও করেছি। সাত্যকি, তোমার কেশাগ্র থেকে নখাগ্র পর্যন্ত নিন্দনীয়, তথাপি আমার নিন্দা করছ! সকলে বারণ করলেও তুমি প্রায়োপবিষ্ট ছিন্নবাহু ভূরিশ্রবার শিরশ্ছেদ করেছিলে। তার চেয়ে পাপকর্ম আর কি হ’তে পারে? ধৃষ্টদ্যুম্নের তিরস্কার শুনে সাত্যকি বললেন, আমি আর কিছু বলতে চাই না, তুমি বধের যোগ্য, তোমাকে বধ করব।

 সাত্যকি গদা নিয়ে ধৃষ্টদ্যুম্নের প্রতি ধাবিত হলেন, তখন কৃষ্ণের ইঙ্গিতে