পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬০
মহাভারত

ভীমসেন সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরে নিরস্ত করলেন। সহদেব মিষ্টবাক্যে বললেন, নরশ্রেষ্ঠ সাত্যকি, অন্ধক বৃষ্ণি ও পাঞ্চাল ভিন্ন আমাদের মিত্র নেই। আপনারা, আমরা এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন সকলেই পরস্পরের মিত্র, অতএব ক্ষমা করুন। ধৃষ্টদ্যুম্ন সহাস্যে বললেন, ভীম, শিনির পৌত্রটাকে ছেড়ে দাও, আমি তীক্ষ্ণ শরের আঘাতে ওর ক্রোধ, যুদ্ধের ইচ্ছা আর জীবন শেষ ক’রে দেব, ও মনে করেছে আমি ছিন্নবাহু ভূরিশ্রবা।

 সাত্যকি ও ধৃষ্টদ্যুম্ন বৃষের ন্যায় গর্জন করতে লাগলেন, তখন কৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠির অনেক চেষ্টায় তাঁদের শান্ত করলেন।

২২। অশ্বত্থামার নারায়ণাস্ত্র মোচন

(পঞ্চদশ দিনের যুদ্ধোন্ত)

 প্রলয়কালে যমের ন্যায় অশ্বত্থামা পাণ্ডবসৈন্য সংহার করতে লাগলেন। তাঁর নারায়ণাস্ত্র থেকে সহস্র সহস্র দীপ্তমুখ সর্পের ন্যায় বাণ এবং লৌহগোলক শতঘ্নী শূল গদা ও ক্ষুরধার চক্র নির্গত হ’ল, পাণ্ডবসৈন্য তৃণরাশির ন্যায় দগ্ধ হতে লাগল। সৈন্যগণ জ্ঞানশূন্য হয়ে পালাচ্ছে এবং অর্জুন উদাসীন হয়ে আছেন দেখে যুধিষ্ঠির বললেন, ধৃষ্টদ্যুম্ন, তুমি পাঞ্চাল সৈন্য নিয়ে পালাও; সাত্যকি, তুমি বৃষ্ণি-অন্ধক সৈন্য নিয়ে গৃহে চ’লে যাও; ধর্মাত্মা বাসুদেব যা কর্তব্য মনে করেন করবেন। আমি সকল সৈন্যকে বলছি — যুদ্ধ ক’রো না, আমি ভ্রাতাদের সঙ্গে অগ্নিপ্রবেশ করব। ভীষ্ম ও দ্রোণ রূপ দুস্তর সাগর পার হয়ে এখন আমরা অশ্বত্থামা রূপ গোষ্পদে নিমজ্জিত হব। আমি শুভাকাঙ্ক্ষী আচার্যকে নিপাতিত করিয়েছি, অতএব অর্জুনের ইচ্ছা পূর্ণ হ’ক। এই দ্রোণ যুদ্ধে অপটু বালক অভিমন্যুকে হত্যা করিয়েছেন; দ্যূতসভায় নিগৃহীত দ্রৌপদীর প্রশ্ন শুনে নীরব ছিলেন; পরিশ্রান্ত অর্জুনকে মারবার জন্য দুর্যোধন যখন যুদ্ধে যান তখন ইনিই তাঁর দেহে অক্ষয় কবচ বেঁধে দিয়েছিলেন; ব্রহ্মাস্ত্রে অনভিজ্ঞ পাঞ্চালগণকে ইনি ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে নিপাতিত করেছিলেন; কৌরবগণ যখন আমাদের নির্বাসিত করে তখন ইনি আমাদের যুদ্ধ করতে দেন নি, আমাদের সঙ্গে বনেও যান নি। আমাদের সেই পরম সুহৃৎ দ্রোণাচার্য নিহত হয়েছেন, অতএব আমরাও সবান্ধবে প্রাণত্যাগ করব।