পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪৬১

 কৃষ্ণ সত্বর এসে দুই হাত তুলে সৈন্যগণকে বললেন, তোমরা শীঘ্র অস্ত্রত্যাগ কর, বাহন থেকে নেমে পড়, নারায়ণাস্ত্র নিবারণের এই উপায়। ভীম বললেন, কেউ অস্ত্রত্যাগ ক’রো না, আমি শরাঘাতে অশ্বত্থামার অস্ত্র নিবারিত করব। এই ব’লে তিনি রথারোহণে অশ্বত্থামার দিকে ধাবিত হলেন। অশ্বত্থামাও হাস্যমুখে অভিভাষণ ক’রে অনলোদ্‌গারী বাণে ভীমকে আচ্ছন্ন করলেন।

 পাণ্ডবসৈন্য অস্ত্র পরিত্যাগ ক’রে হস্তী অশ্ব ও রথ থেকে নেমে পড়ল, তখন অশ্বত্থামার নারায়ণাস্ত্র কেবল ভীমের দিকে যেতে লাগল। অর্জুন সত্বর রথ থেকে নেমে ভীমের কাছে গেলেন। কৃষ্ণ বললেন, পাণ্ডুপুত্র, এ কি করছেন? বারণ করলেও যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হচ্ছেন না কেন? যদি আজ জয়ী হওয়া সম্ভবপর হ’ত তবে আমরা সকলেই যুদ্ধ করতাম। দেখুন, পাণ্ডবপক্ষের সকলেই রথ থেকে নেমেছেন। এই ব’লে কৃষ্ণ ও অর্জুন সবলে ভীমকে রথ থেকে নামালেন এবং তাঁর অস্ত্র কেড়ে নিলেন। ভীম ক্রোধে রক্তনয়ন হয়ে সর্পের ন্যায় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন, নারায়ণাস্ত্রও নিবৃত্ত হ’ল।

 হতাবশিষ্ট পাণ্ডবসৈন্য আবার যুদ্ধে উদ্যত হয়েছে দেখে দুর্যোধন বললেন, অশ্বত্থামা, আবার অস্ত্র প্রয়োগ কর। অশ্বত্থামা বিষণ্ণ হয়ে বললেন, রাজা, এই নারায়ণাস্ত্র দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করলে প্রয়োগকারীকেই বধ করে। নিশ্চয় কৃষ্ণ পাণ্ডবগণকে এই অস্ত্র নিবারণের উপায় বলেছেন, নতুবা আজ সমস্ত শত্রু ধ্বংস হ’ত। তখন দুর্যোধনের অনুরোধে অশ্বত্থামা অন্য অস্ত্র নিয়ে আবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন ও সাত্যকিকে পরাস্ত ক’রে মালবরাজ সুদর্শন, পুরুবংশীয় বৃদ্ধক্ষত্র ও চেদি দেশের যুবরাজকে বধ করলেন। তার পর তিনি অর্জুনের দিকে ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্র নিক্ষেপ করলেন, অর্জুন ব্রহণাস্ত্র প্রয়োগ ক’রে অশ্বত্থামার অস্ত্র ব্যর্থ করে দিলেন।

 এই সময়ে স্নিগ্ধজলদবর্ণ সর্ববেদের আধার সাক্ষাৎ ধর্ম সদৃশ মহর্ষি ব্যাস আবির্ভূত হলেন। অশ্বত্থামা কাতর হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ভগবান, আমার অস্ত্র মিথ্যা হ’ল কেন? কৃষ্ণার্জুনের মায়ায় না দৈব ঘটনায় এমন হ’ল? কৃষ্ণ ও অর্জুন মানুষ হয়ে আমার অস্ত্র থেকে কি করে নিস্তার পেলেন?

 ব্যাসদেব বললেন, স্বয়ং নারায়ণ মায়ার দ্বারা জগৎ মোহিত ক’রে কৃষ্ণরূপে বিচরণ করছেন। তাঁর তপস্যার ফলে তাঁরই তুল্য নর-ঋষি জন্মেছিলেন, অর্জুন সেই নরের অবতার। অশ্বত্থামা, তুমিও রুদ্রের অংশে জন্মেছ। কৃষ্ণ অর্জুন ও তোমার অনেক জন্ম হয়ে গেছে, তোমরা বহু কর্ম যোগ ও তপস্যা করেছ,