পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬২
মহাভারত

যুগে যুগে কৃষ্ণার্জুন শিবলিঙ্গের পূজা করেছেন, তুমি শিবপ্রতিমার পূজা করেছ। কৃষ্ণ রুদ্রের ভক্ত এবং রুদ্র হ’তেই তাঁর উৎপত্তি।

 ব্যাসের বাক্য শুনে অশ্বত্থামা রুদ্রকে নমস্কার করলেন এবং কেশবের প্রতি শ্রদ্ধাবান হলেন। তিনি রোমাঞ্চিতদেহে মহর্ষি ব্যাসকে অভিবাদন করে কৌরবগণের নিকট ফিরে গেলেন। সে দিনের যুদ্ধ শেষ হ’ল।

২৩। মহাদেবের মাহাত্ম্য

 ব্যাসদেবকে দেখে অর্জুন বললেন, মহামুনি, আমি যুদ্ধ করবার সময় দেখেছি এক অগ্নিপ্রভ পুরুষ প্রদীপ্ত শূল নিয়ে আমার আগে আগে যাচ্ছেন, এবং যে দিকে যাচ্ছেন সেই দিকেই শত্রুরা পরাভূত হচ্ছে। তাঁর চরণ ভূমিস্পর্শ করে না, তিনি শূলও নিক্ষেপ করেন না, অথচ তাঁর শূল থেকে সহস্র সহস্র শূল নির্গত হয়। তাঁর প্রভাবেই শত্রু পরাভূত হয়, কিন্তু লোকে মনে করে আমিই পরাভূত করেছি। এই শূলধারী সূর্যসন্নিভ পুরুষশ্রেষ্ঠ কে তা বলুন।

 ব্যাস বললেন, অর্জুন, তুমি মহাদেবকে দেখেছ। তিনি প্রজাপতিগণের প্রধান, সর্বলোকেশ্বর, ঈশান, শিব, শংকর, ত্রিলোচন, রুদ্র, হর, স্থাণু, শম্ভু, স্বয়ম্ভু, ভূতনাথ, বিশ্বেশ্বর, পশুপতি, সর্ব, ধূর্জটি, বৃষধ্বজ, মহেশ্বর, পিনাকী, ত্র্যম্বক। তাঁর বহু পারিষদ আছেন, তাঁদের নানা রূপ — বামন, জটাধারী, মুণ্ডিতমস্তক, মহোদর, মহাকায়, মহাকর্ণ, বিকৃতমুখ, বিকৃতচরণ, বিকৃতকেশ। তিনিই যুদ্ধে তোমার আগে আগে যান। তুমি তাঁর শরণাপন্ন হও। পুরাকালে প্রজাপতি দক্ষ এক যজ্ঞ করেছিলেন, মহাদেবের ক্রোধে তা পণ্ড হয়। পরিশেষে দেবতারা তাঁকে প্রণিপাত করে তাঁর শরণাপন্ন হলেন এবং তাঁর জন্য বিশিষ্ট যজ্ঞভাগ নির্দিষ্ট করে দিলেন। তখন মহাদেব প্রসন্ন হলেন। পুরাকালে কমলাক্ষ তারকাক্ষ ও বিদ্যুন্মালী নামে তিন অসুর ব্রহ্মার নিকট বর পেয়ে নগরতুল্য বৃহৎ তিন বিমানে আকাশে ঘুরে বেড়াত। এই বিমানের একটি স্বর্ণময়, আর একটি রজতময়, আর একটি লৌহময়। এই ত্রিপুরাসুরের উপদ্রবে পীড়িত হয়ে দেবতারা মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন। মহাদেব ত্রিশূলের আঘাতে সেই ত্রিপুর বিনষ্ট করলেন। সেই সময়ে ভগবতী উমা পঞ্চশিখাযুক্ত একটি বালককে কোলে নিয়ে দেবগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, কে এই বালক? ইন্দ্র অসূয়াবশে বালকের উপর বজ্রপ্রহার করতে গেলেন, মহাদেব ইন্দ্রের বাহু স্তম্ভিত ক’রে দিলেন। তার পর পিতামহ ব্রহ্মা মহেশ্বরকে