পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
মহাভারত

৯। জনমেজয়ের সর্পসত্র

 মন্ত্রীদের কাছে পিতার মৃত্যুবিবরণ শুনে জনমেজয় অত্যন্ত দুঃখে অশ্রু মোচন করতে লাগলেন, তার পর জলম্পর্শ ক’রে বললেন, যে দুরাত্মা তক্ষক আমার পিতার প্রাণহিংসা করেছে তার উপর আমি প্রতিশোধ নেব। তিনি পুরোহিতদের প্রশ্ন করলেন, আপনারা এমন ক্রিয়া জানেন কি যাতে তক্ষককে সবান্ধবে প্রদীপ্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করা যায়? পরোহিতরা বললেন, মহারাজ, সর্পসত্র নামে এক মহাযজ্ঞ আছে, আমরা তার পদ্ধতি জানি।

 রাজার আজ্ঞায় যজ্ঞের আয়োজন হ’তে লাগল। যজ্ঞস্থান মাপবার সময় একজন পুরাণকথক সূত বললে, কোনও ব্রাহ্মণ এই যজ্ঞের ব্যাঘাত করবেন। জনমেজয় দ্বারপালকে বললেন, আমার অজ্ঞাতসারে কেউ যেন এখানে না আসে। অনন্তর যথাবিধি সর্পসত্র আরম্ভ হ’ল। কৃষ্ণবসনধারী যাজকগণ ধূমে রক্তলোচন হয়ে সর্পগণকে আহ্বান ক’রে অগ্নিতে আহুতি দিতে লাগলেন। নানাজাতীয় নানাবর্ণ অসংখ্য সর্প অগ্নিতে প’ড়ে বিনষ্ট হ’ল।

 তক্ষক নাগ আশ্রয়ের জন্য ইন্দ্রের কাছে গেল। ইন্দ্র বললেন, তোমার ভয় নেই, এখানেই থাক। স্বজনবর্গের মৃত্যুতে কাতর হয়ে বাসুকি তাঁর ভগিনীকে বললেন, কল্যাণী, তুমি তোমার পুত্রকে বল যেন আমাদের সকলকে রক্ষা করে। তখন জরৎকারু আস্তীককে পূর্ব ইতিহাস জানিয়ে বললেন, হে অমরতুল্য পত্র, তুমি আমার ভ্রাতা ও আত্মীয়বর্গকে যজ্ঞাগ্নি থেকে রক্ষা কর। আস্তীক বললেন, তাই হবে, আমি নাগরাজ বাসুকিকে তাঁর মাতৃদত্ত শাপ থেকে রক্ষা করব।

 আস্তীক যজ্ঞস্থানে গেলেন, কিন্তু দ্বারপাল তাঁকে প্রবেশ করতে দিলে না। তখন তিনি স্তুতি করতে লাগলেন—পরীক্ষিৎপুত্র জনমেজয়, তুমি ভরতবংশের প্রধান, তোমার এই যজ্ঞ প্রয়াগে অনুষ্ঠিত চন্দ্র, বরুণ ও প্রজাপতির যজ্ঞের তুল্য; আমাদের প্রিয়জনের যেন মঙ্গল হয়। ইন্দ্রের শত যজ্ঞ, যম রন্তিদেব কুবের ও দাশরথি রামের যজ্ঞ, এবং যুধিষ্ঠির কৃষ্ণদ্বৈপায়ন প্রভৃতির যজ্ঞ যেরূপ, তোমার এই যজ্ঞও সেইরূপ; আমাদের প্রিয়জনের যেন মঙ্গল হয়। তোমার তুল্য প্রজাপালক রাজা জীবলোকে নেই, তুমি বরুণ ও ধর্মরাজের তুল্য। তুমি যমের ন্যায় ধর্মজ্ঞ, কৃষ্ণের ন্যায় সর্বগুণসম্পন্ন।

 আস্তীকের স্তুতি শুনে জনমেজয় বললেন, ইনি অল্পবয়স্ক হ’লেও বৃদ্ধের ন্যায় কথা বলছেন, এঁকে বর দিতে চাই। রাজার সদস্যগণ বললেন, এই ব্রাহ্মণ