পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কর্ণপর্ব

১। কর্ণের সেনাপতিত্বে অভিষেক

 দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা মনে করেছিলেন যে নারায়ণাস্ত্র দ্বারা সমস্ত পাণ্ডববাহিনী ধ্বংস করবেন। তাঁর সে সংকল্প ব্যর্থ হ’ল। সন্ধ্যাকালে দুর্যোধন যুদ্ধবিরতির আদেশ দিয়ে নিজ শিবিরে ফিরে এলেন। তিনি কোমল আস্তরণযুক্ত সুখশয্যায় উপবিষ্ট হয়ে স্বপক্ষীয় মহাধনুর্ধরগণকে মধুরবাক্যে অনুনয় ক’রে বললেন, হে বুদ্ধিমান রাজগণ, আপনারা অবিলম্বে নিজের নিজের মত বলুন, এ অবস্থায় আমার কি করা উচিত।

 দুর্যোধনের কথা শুনে রাজারা যুদ্ধসূচক নানাপ্রকার ইঙ্গিত করলেন। অশ্বত্থামা বললেন, পণ্ডিতগণের মতে কার্যসিদ্ধির উপায় এই চারটি — কার্যে অনুরাগ, উদ্‌যোগ, দক্ষতা ও নীতি; কিন্তু সবই দৈবের অধীন। আমাদের পক্ষে যেসকল অনুরক্ত উদ্‌যোগী দক্ষ ও নীতিজ্ঞ দেবতুল্য মহারথ ছিলেন তাঁরা হত হয়েছেন; তথাপি আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়, কারণ উপযুক্ত নীতির প্রয়োগে দৈবকেও অনুকূল করা যায়। আমরা কর্ণকে সেনাপতি ক’রে শত্রুকুল মথিত করব। ইনি মহাবল, অস্ত্রবিশারদ, যুদ্ধে দুর্ধর্ষ, এবং কৃতান্তের ন্যায় অসহনীয়। ইনিই যুদ্ধে শত্রুজয় করবেন।

 দুর্যোধন আশ্বস্ত ও প্রীত হয়ে কর্ণকে বললেন, মহাবাহু, আমি তোমার বীর্য এবং আমার প্রতি সৌহার্দ জানি। ভীষ্ম আর দ্রোণ মহাধনুর্ধর হ’লেও বৃদ্ধ এবং ধনঞ্জয়ের পক্ষপাতী ছিলেন, তোমার কথাতেই আমি তাঁদের সেনাপতির পদ দিয়েছিলাম। তাঁরা নিহত হয়েছেন, এখন তোমার তুল্য অন্য যোদ্ধা আমি দেখছি না। তুমি জয়ী হবে তাতে আমার সন্দেহ নেই, অতএব তুমি আমার সৈন্যচালনার ভার নাও, নিজেই নিজেকে সেনাপতিত্বে অভিষিক্ত কর। সূতপুত্র, তুমি সম্মুখে থাকলে অর্জুন যুদ্ধ করতেই চাইবে না। কর্ণ বললেন, মহারাজ, আমি পুত্রসমেত পাণ্ডবগণ ও জনার্দনকে জয় করব। তুমি নিশ্চিন্ত হও, আমি তোমার সেনাপতি হব; ধ’রে নাও যে পাণ্ডবরা পরাজিত হয়েছে।

 তার পর দুর্যোধন ও অন্যান্য রাজারা ক্ষৌমবস্ত্রে আচ্ছাদিত তাম্রময় আসনে