পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৬৫

কর্ণকে বসালেন, এবং জলপূর্ণ স্বর্ণময় ও মৃন্ময় কুম্ভ এবং মণিমুক্তাভূষিত গজদন্ত, গণ্ডারশৃঙ্গ ও মহাবৃষের শৃঙ্গে নির্মিত পাত্র দ্বারা শাস্ত্রবিধি অনুসারে অভিষিক্ত করলেন। বন্দিগণ ও ব্রাহ্মণগণ বললেন, রাধেয় কর্ণ, সূর্য যেমন উদিত হয়ে অন্ধকার নষ্ট করেন, আপনি সেইরূপ পাণ্ডব ও পাঞ্চালগণকে ধ্বংস করুন। পেচক যেমন সূর্যের প্রখর রশ্মি সইতে পারে না, কৃষ্ণ ও পাণ্ডবরাও সেইরূপ আপনার শরবর্ষণ সইতে পারবেন না। বজ্রধর ইন্দ্রের সম্মুখে দানবদের ন্যায় পাণ্ডব ও পাঞ্চালগণও আপনার সম্মুখে দাঁড়াতে পারবেন না।

২। অশ্বত্থামার পরাজয়

(ষোড়শ দিনের যুদ্ধ)

 পরদিন সূর্যোদয় হ’লে কর্ণ যুদ্ধসজ্জার আদেশ দিলেন। তখন হস্তী অশ্ব ও বর্মাবৃত রথ সকল প্রস্তুত হ’ল, যোদ্ধারা পরস্পরকে ডাকতে লাগলেন। কর্ণ শঙ্খধ্বনি করতে করতে যুদ্ধযাত্রা করলেন। তাঁর রথ শ্বেতপতাকায় ভূষিত এবং বহু ধনু তূণীর গদা শতঘ্নী শক্তি শূল তোমর প্রভৃতি অস্ত্র সমন্বিত। রথধ্বজের উপর লাঞ্ছনাস্বরূপ গজবন্ধনরজ্জু ছিল। বলাকাবর্ণ চার অশ্ব সেই রথ বহন ক’রে নিয়ে চলল। কর্ণ মকরব্যূহ রচনা ক’রে স্বয়ং তার মুখে রইলেন এবং শকুনি, তৎপুত্র উলূক, অশ্বত্থামা, দুর্যোধনাদি, নারায়ণী সেনা সহ কৃতবর্মা, ত্রিগর্ত ও দাক্ষিণাত্য সৈন্য সহ কৃপাচার্য, মদ্রদেশীয় বৃহৎ সৈন্য সহ শল্য, সহস্র রথ ও তিন শত হস্তী সহ সুষেণ, এবং বিশাল বাহিনী সহ রাজা চিত্র ও তাঁর ভ্রাতা চিত্রসেন সেই ব্যূহের বিভিন্ন অংশ রক্ষা করতে লাগলেন।

 কর্ণকে সসৈন্যে আসতে দেখে যুধিষ্ঠির অর্জুনকে বললেন, মহাবাহু, কৌরববাহিনীর শ্রেষ্ঠ বীরগণ হত হয়েছেন, কেবল নিকৃষ্ট যোদ্ধারা অবশিষ্ট আছেন। সূতপত্র কর্ণই ও পক্ষের একমাত্র মহাধনুর্ধর, তাঁকে বধ ক’রে তুমি বিজয়ী হও। যে শল্য দ্বাদশ বৎসর আমার হৃদয়ে বিদ্ধ আছে তা কর্ণ নিহত হ’লে উদ্ধৃত হবে, এই বুঝে তুমি ইচ্ছামত ব্যূহ রচনা কর। তখন অর্জুন অর্ধচন্দ্রব্যূহ রচনা করলেন, তাঁর বাম পার্শ্বে ভীমসেন, দক্ষিণে ধৃষ্টদ্যুম্ন, এবং মধ্যদেশে যুধিষ্ঠির ও তাঁর পশ্চাতে অর্জুন নকুল সহদেব রইলেন। দুই পাঞ্চালবীর যুধামন্য, ও উত্তমৌজা এবং অন্যান্য যোদ্ধারা ব্যূহের উপযুক্ত স্থানে অবস্থান করলেন।