পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৬
মহাভারত

 দুই পক্ষে শঙ্খ ভেরী পণব প্রভৃতি রণবাদ্য বেজে উঠল, জয়াকাঙ্ক্ষী বীরগণ সিংহনাদ করতে লাগলেন। অশ্বের হ্রেষা, হস্তীর বৃংহিতধ্বনি, এবং রথচক্রের ঘর্ঘর শব্দে সর্ব দিক নিনাদিত হ’ল। গজারোহী ভীমসেন ও কুলূত দেশের রাজা ক্ষেমধূর্তি সসৈন্যে পরস্পরকে আক্রমণ করলেন। ক্ষেমধূর্তি ভীমের গদাঘাতে নিহত হলেন। কর্ণের সঙ্গে নকুল, অশ্বত্থামার সঙ্গে ভীম, কেকয়দেশীয় বিন্দ অনুবিন্দের সঙ্গে সাত্যকি, অর্জুনপুত্র শ্রুতকর্মার সঙ্গে অভিসাররাজ চিত্রসেন, যুধিষ্ঠিরপুত্র প্রতিবিন্ধ্যের সঙ্গে চিত্র, দুর্যোধনের সঙ্গে যুধিষ্ঠির, সংশপ্তকগণের সঙ্গে অর্জুন, কৃপাচার্যের সঙ্গে ধৃষ্টদ্যুম্ন, কৃতবর্মার সঙ্গে শিখণ্ডী, শল্যের সঙ্গে সহদেবপুত্র শ্রুতসেন, এবং দুঃশাসনের সঙ্গে সহদেব ঘোর যুদ্ধ করতে লাগলেন।

 সাত্যকির শরাঘাতে অনুবিন্দ এবং অসির আঘাতে বিন্দ নিহত হলেন। শ্রুতকর্মা ভল্লের আঘাতে চিত্রসেনের মস্তক ছেদন করলেন। প্রতিবিন্ধ্যের তোমরের আঘাতে চিত্র নিহত হলেন। ভীমের প্রচণ্ড বল এবং অশ্বত্থামার আশ্চর্য অস্ত্রশিক্ষা দেখে আকাশচারী সিদ্ধ চারণ মহর্ষি ও দেবগণ সাধু সাধু বলতে লাগলেন। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর অশ্বত্থামা ও ভীম পরস্পরের শরাঘাতে অচেতন হয়ে নিজ নিজ রথের মধ্যে পড়ে গেলেন, তাঁদের সারথিরা রথ সরিয়ে নিয়ে গেল।

 কিছুক্ষণ পরে অশ্বত্থামা পুনর্বার রণভূমিতে এসে অর্জুনকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন। অর্জুন তখন সংশপ্তকদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। কৃষ্ণ অশ্বত্থামার কাছে রথ নিয়ে গিয়ে বললেন, অশ্বত্থামা, আপনি স্থির হয়ে অস্ত্রপ্রহার করুন এবং অর্জুনের প্রহার সহ্য করুন, উপজীবীদের ভর্তৃপিণ্ড শোধ করবার এই সময়[১]। ব্রাহ্মণদের বাদানুবাদ সূক্ষ্ম, কিন্তু ক্ষত্রিয়ের জয়পরাজয় স্থূল অস্ত্রে সাধিত হয়। আপনি মোহবশে অর্জুনের কাছে যে সৎকার চেয়েছেন তা পাবার জন্য স্থির হয়ে যুদ্ধ করুন। ‘তাই হবে’ এই ব’লে অশ্বত্থামা অনেক গুলি নারাচ নিক্ষেপ ক’রে কৃষ্ণ ও অর্জুনকে বিদ্ধ করলেন। অর্জুনও তাঁর গাণ্ডীব ধনু থেকে নিরন্তর বাণবর্ষণ করতে লাগলেন। কলিঙ্গ বঙ্গ অঙ্গ ও নিষাদ বীরগণ ঐরাবততুল্য হস্তীর দল নিয়ে অর্জুনের প্রতি ধাবিত হলেন, কিন্তু বিধ্বস্ত হয়ে পলায়ন করলেন।

 অশ্বত্থামার লৌহময় বাণের আঘাতে কৃষ্ণ ও অর্জুন রক্তাক্ত হলেন, লোকে

  1. অর্থাৎ যুদ্ধ ক’রে আপনার অন্নদাতা কৌরবদের ঋণ শোধ করুন।