পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৬৭

মনে করলে তাঁরা নিহত হয়েছেন। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, তুমি অসাবধান হয়ে আছ কেন, অশ্বত্থামাকে বধ কর। প্রতিকার না করলে ব্যাধি যেমন কষ্টকর হয়, অশ্বত্থামাকে উপেক্ষা করা সেইরূপ বিপজ্জনক হবে। তখন অর্জুন সাবধানে শরক্ষেপণ ক’রে অশ্বত্থামার চন্দনচর্চিত দুই বাহু বক্ষ মস্তক ও ঊরুদ্বয় বিদ্ধ করলেন। অশ্বত্থামার রথের অশ্বসকল আহত হয়ে রথ নিয়ে সবেগে দূরে চ’লে গেল। অর্জুনের শরাঘাতে অভিভূত ও নিরুৎসাহ হয়ে অশ্বত্থামা আর যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করলেন না, কৃষ্ণার্জুনের জয় হয়েছে জেনে কর্ণের সৈন্যমধ্যে প্রবেশ করলেন।

৩। দণ্ডধার-দণ্ড-বধ—রণভূমির ভীষণতা

(ষোড়শ দিনের আরও যুদ্ধ)

 মগধরাজ দণ্ডধার পাণ্ডবসেনার উত্তর দিকে রথ হস্তী অশ্ব ও পদাতি বিনষ্ট করছিলেন। আর্তনাদ শুনে কৃষ্ণ রথ ফিরিয়ে নিয়ে অর্জুনকে বললেন, রাজা দণ্ডধার অস্ত্রবিদ্যায় ও পরাক্রমে ভগদত্তের চেয়ে নিকৃষ্ট নন, তাঁর হস্তীও বিপক্ষসেনা মর্দন করে। অতএব তুমি আগে তাঁকে বধ ক’রে তার পর সংশপ্তকদের সঙ্গে যুদ্ধ ক’রো। এই ব’লে কৃষ্ণ অর্জুনের রথ দণ্ডধারের কাছে নিয়ে গেলেন। দণ্ডধার তখন শরাঘাতে পাণ্ডবসৈন্য সংহার করছিলেন, তাঁর হস্তীও চরণ ও শুণ্ডের প্রহারে রথ অশ্ব গজ ও সৈন্য মর্দন করছিল। অর্জুন ক্ষুরধার তিন বাণে দণ্ডধারের বাহুদ্বয় ও মস্তক ছেদন করলেন এবং হস্তী ও হস্তিচালককেও নিপাতিত করলেন। মগধরাজকে নিহত দেখে তাঁর ভ্রাতা দণ্ড হস্তিপৃষ্ঠে এসে কৃষ্ণার্জুনকে আক্রমণ করলেন, কিন্তু তিনিও অর্জুনের অর্ধচন্দ্র বাণে ছিন্নবাহু ছিন্নমুণ্ড হলেন। তার পর অর্জুন ফিরে গিয়ে পুনর্বার সংশপ্তকদের বধ করতে লাগলেন। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, তুমি খেলা করছ কেন, সংশপ্তকদের বিনষ্ট ক’রে কর্ণবধে ত্বরান্বিত হও।

 অর্জুন অবশিষ্ট[১] সংশপ্তকগণকে বধ করলেন। শরক্ষেপণে অর্জুনের ক্ষিপ্রতা দেখে গোবিন্দ বললেন, আশ্চর্য! তার পর তিনি রথের শ্বেতবর্ণ চার অশ্ব চালিত করলেন। হংস যেমন সরোবরে যায় সেইরূপ অশ্বগুলি শত্রুসৈন্যমধ্যে প্রবেশ করলে। সংগ্রামভূমি দেখতে দেখতে কৃষ্ণ বললেন, পার্থ, দুর্যোধনের জন্যই

  1. কিন্তু এর পরেও সংশপ্তকরা যুদ্ধ করেছে।