পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৮
মহাভারত

পৃথিবীর রাজাদের এই ভীষণ ক্ষয় হচ্ছে। দেখ, চতুর্দিকে স্বর্ণভূষিত ধনুর্বাণ তোমর প্রাস চর্ম প্রভৃতি বিকীর্ণ হয়ে রয়েছে, জয়াভিলাষী অস্ত্রধারী যোদ্ধারা প্রাণহীন হয়ে পড়ে আছে, কিন্তু তাদের জীবিতের ন্যায় দেখাচ্ছে। বীরগণের কুণ্ডলভূষিত চন্দ্রবদন এবং শ্মশ্রুমণ্ডিত মখমুণ্ডলে যুদ্ধস্থল আবৃত হয়েছে, ভূমিতে শোণিতের কর্দম হয়েছে, চারিদিকে জীবিত মানুষ কাতর শব্দ করছে। আত্মীয়রা অস্ত্র ত্যাগ ক’রে সরোদনে জলসেক ক’রে আহতদের পরিচর্যা করছে। কেউ কেউ মৃত বীরগণকে আচ্ছাদিত ক’রে আবার যুদ্ধ করতে যাচ্ছে, কেউ কেউ অচেতন প্রিয় বন্ধুকে আলিঙ্গন করছে। অর্জুন, তুমি এই মহাযুদ্ধে যে কর্ম করেছ তা তোমারই অথবা দেবরাজেরই যোগ্য।

৪। পাণ্ড্যরাজবধ—দুঃশাসনের পরাজয়

(ষোড়শ দিনের আরও যুদ্ধ)

 লোকবিশ্রুত বীরশ্রেষ্ঠ পাণ্ড্যরাজ পাণ্ডবপক্ষে যুদ্ধ করছিলেন। ইনি ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ অর্জুন কৃষ্ণ প্রভৃতি মহারথগণকে নিজের সমকক্ষ মনে করতেন না, ভীষ্ম-দ্রোণের সঙ্গে নিজের তুলনাও সইতে পারতেন না। এই মহাধনবান সর্বাস্ত্রবিশারদ পাণ্ড্য পাশহস্ত কৃতান্তের ন্যায় কর্ণের সৈন্য বধ করছিলেন। অশ্বত্থামা তাঁর কাছে গিয়ে মিষ্টবাক্যে সহাস্যে যুদ্ধে আহ্বান করলেন। দুজনে তুমুল যুদ্ধ হ’ল। আট গরুতে টানে এমন আটখানা গাড়িতে যত অস্ত্র ধরে, অশ্বত্থামা তা চার দণ্ডের মধ্যে নিক্ষেপ করলেন। দ্রোণপুত্রের সেই বাণবর্ষণ বায়ব্যাস্ত্রে অপসারিত ক’রে পাণ্ড্যরাজ আনন্দে গর্জন করতে লাগলেন। অশ্বত্থামা পাণ্ড্যের রথ অশ্ব সারধি এবং সমস্ত অস্ত্র বিনষ্ট করলেন, কিন্তু শত্রুকে আয়ত্তিতে পেয়েও বধ করলেন না। এই সময়ে একটি চালকহীন সুসজ্জিত বলশালী হস্তী সবেগে পাণ্ড্যরাজের কাছে এসে পড়ল। সিংহ যেমন পর্বতশৃঙ্গে ওঠে, গজযুদ্ধপটু পাণ্ড্য সেইরূপ সেই মহাগজের পৃষ্ঠে চ’ড়ে বসলেন এবং সিংহনাদ ক’রে অশ্বত্থামার প্রতি একটি তোমর নিক্ষেপ করলেন। তোমরের আঘাতে অশ্বথামার মণিমুক্তাভূষিত কিরীট বিদীর্ণ হয়ে ভূপাতিত হ’ল। তখন অশ্বত্থামা পদাহত সর্পের ন্যায় ক্রুদ্ধ হয়ে শরাঘাতে হস্তীর পদ ও শুণ্ড এবং পাণ্ড্যরাজের বাহু ও মস্তক ছেদন করলেন, পাণ্ড্যের ছয় অনুচরকেও বধ করলেন।