পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৬৯

 পাণ্ড্যরাজ নিহত হ’লে কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, আমি যুধিষ্ঠির ও অন্যান্য পাণ্ডবদের দেখছি না, ওদিকে কর্ণ প্রজ্বলিত অগ্নির ন্যায় যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছেন, অশ্বত্থামাও সৃঞ্জয়গণকে বধ করছেন এবং আমাদের হস্তী অশ্ব রথ পদাতি মর্দন করছেন। অর্জুন বললেন, হৃষীকেশ, শীঘ্র রথ চালাও।

 কৌরব ও পাণ্ডবগণ যুদ্ধে মিলিত হলেন। প্রাচ্য দাক্ষিণাত্য অঙ্গ বঙ্গ পুণ্ড্র মগধ তাম্রলিপ্ত মেকল কোশল মদ্র দশার্ণ নিষধ ও কলিঙ্গ দেশের গজযুদ্ধবিশারদ যোদ্ধারা পাঞ্চালসৈন্যের উপর অস্ত্রবর্ষণ করতে লাগলেন। সাত্যকি নারাচের আঘাতে বঙ্গরাজকে হস্তী থেকে নিপাতিত করলেন। নকুল অর্ধচন্দ্র বাণে অঙ্গরাজপুত্রের মস্তক ছেদন করলেন। পাণ্ডবগণের বাণবর্ষণে বিপক্ষের বহু হস্তী নিহত হ’ল। সহদেবের শরাঘাতে দুঃশাসন জ্ঞানহীন হয়ে প’ড়ে গেলেন, তাঁর সারথি অত্যন্ত ভীত হয়ে রথ নিয়ে পালিয়ে গেল।

৫। কর্ণের হস্তে নকুলের পরাজয় —যুযুৎসু প্রভৃতির যুদ্ধ

(ষোড়শ দিনের আরও যুদ্ধ)

 নকুল কৌরবসেনা মথন করছেন দেখে কর্ণ ক্রুদ্ধ হয়ে বাধা দিতে এলেন। নকুল সহাস্যে তাঁকে বললেন, বহুদিন পরে দেবতারা আমার উপর সদয় হয়েছেন, তুমি আমার সমক্ষে এসেছ। পাপী, তুমিই সমস্ত অনর্থ শত্রুতা ও কলহের মূল, আজ তোমাকে সমরে বধ ক’রে কৃতার্থ ও বিগতজ্বর হব। কর্ণ বললেন, ওহে বীর, আগে তোমার পৌরুষ দেখাও তার পর গর্ব ক’রো। বৎস, বীরগণ কিছু না ব’লেই যথাশক্তি যুদ্ধ করেন, তুমিও তাই কর, আমি তোমার দর্প চূর্ণ করব। তার পর নকুল ও কর্ণ পরস্পরের প্রতি প্রচণ্ড বাণবর্ষণ করতে লাগলেন। দুই পক্ষের সৈন্য শরাঘাতে নিপীড়িত হয়ে দূরে সরে গিয়ে দর্শকের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। কর্ণের বাণে সমস্ত আকাশ মেঘাবৃতের ন্যায় ছায়াময় হ’ল। কর্ণ নকুলের চার অশ্ব, রথ পতাকা গদা খড়্‌গ চর্ম প্রভৃতি বিনষ্ট করলেন, নকুল রথ থেকে নেয়ে একটা পরিঘ নিয়ে দাঁড়ালেন। কর্ণের শরাঘাতে সেই পরিঘও নষ্ট হ’ল, তখন নকুল ব্যাকুল হয়ে পালাতে লাগলেন। কর্ণ বেগে পিছনে গিয়ে তাঁর জ্যা সমেত বৃহৎ ধনু নকুলের গলায় লাগিয়ে সহাস্যে বললেন, তুমি যে মিথ্যা বাক্য বলেছিলে, এখন বার বার আহত হবার পর আবার তা বল দেখি! বৎস, তুমি বলবান কৌরবদের