পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭০
মহাভারত

সঙ্গে যুদ্ধ ক’রো না, নিজের সমান যোদ্ধাদের সঙ্গেই যুদ্ধ ক’রো; আমার কাছে পরাজয়ের জন্য লজ্জিত হয়ো না। মাদ্রীপুত্র, এখন গৃহে যাও অথবা কৃষ্ণার্জুনের কাছে যাও। বীর ও ধর্মজ্ঞ কর্ণ নকুলকে বধ করতে পারতেন, কিন্তু কুন্তীর অনুরোধ স্মরণ ক’রে মুক্তি দিলেন। দুঃখসন্তপ্ত নকুল কলসে রুদ্ধ সর্পের ন্যায় নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে যুধিষ্ঠিরের কাছে গিয়ে তাঁর রথে উঠলেন। কর্ণ তখন পাঞ্চালসৈন্যদের দিকে গেলেন। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর পাঞ্চালসৈন্য বিধস্ত হ’ল, হতাবশিষ্ট পাঞ্চালবীরগণ বেগে পালাতে লাগলেন, কর্ণও তাঁদের পিছনে ধাবিত হলেন।

 বৈশ্যাগভর্জাত ধৃতরাষ্ট্রপুত্র যুযুৎসু পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিয়েছিলেন[১]। তিনি দুর্যোধনের বিশাল বাহিনী মথন করছেন দেখে শকুনিপুত্র উলূক তাঁকে আক্রমণ করলেন। যুযুৎসুর অশ্ব ও সারথি বিনষ্ট হ’ল, তিনি অন্য রথে উঠলেন। বিজয়ী উলূক তখন পাঞ্চাল ও সৃঞ্জয়গণকে বধ করতে গেলেন।

 দুর্যোধনভ্রাতা শ্রুতকর্মা নকুলপুত্র শতানীকের অশ্ব রথ ও সারথি বিনষ্ট করলেন, শতানীক ভগ্ন রথে থেকেই একটি গদা নিক্ষেপ করলেন, তার আঘাতে শ্রুতকর্মারও অশ্ব রথ সারথি বিনষ্ট হ’ল। তখন রথহীন দুই বীর পরস্পরকে দেখতে দেখতে রণভূমি থেকে চ’লে গেলেন।

 ভীমের পত্র সুতসোম শকুনির সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। শকুনির শরাঘাতে সুতসোমের অশ্ব সারথি রথ ও ধনু প্রভৃতি নষ্ট হ’ল, সুতসোম তখন ভূমিতে নেমে যমদণ্ডতুল্য খড়্‌গ ঘোরাতে লাগলেন। তিনি চতুর্দশ প্রকার মণ্ডলাকারে বেগে বিচরণ ক’রে ভ্রান্ত উদ্‌ভ্রান্ত আবিদ্ধ আপ্লুত বিপ্লুত সূত সম্পাত সমুদীর্ণ প্রভৃতি গতি দেখালেন। শকুনি তীক্ষ্ণ ক্ষুরপ্রের আঘাতে সুতসোমের খড়্‌গ দ্বিখণ্ড করলেন, সুতসোম তাঁর হস্তধৃত খড়্‌গাংশ নিক্ষেপ ক’রে শকুনির ধনু ছেদন করলেন। তার পর শকুনি অন্য ধনু নিয়ে পাণ্ডবসৈন্যের অভিমুখে ধাবিত হলেন।

 কৃপাচার্যের সঙ্গে ধৃষ্টদ্যুম্নের যুদ্ধ হচ্ছিল। কৃপের শরাঘাতে আহত ও অবসন্ন হয়ে ধৃষ্টদ্যুম্ন ভীমের কাছে চ’লে গেলেন, তখন কৃপ শিখণ্ডীকে আক্রমণ করলেন। বহুক্ষণ যুদ্ধের পর শিখণ্ডী শরাঘাতে মূর্ছিত হলেন, তাঁর সারথি রণভূমি থেকে সত্বর রথ সরিয়ে নিয়ে গেল।


  1. ভীষ্মপর্ব ৬-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।