পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৭১

৬। পাণ্ডবগণের জয়

(ষোড়শ দিনের যুদ্ধান্ত)

 কৌরবসৈন্যের সঙ্গে ত্রিগর্ত শিবি শাল্ব সংশপ্তক ও নারায়ণ সৈন্যগণ, এবং ভ্রাতা ও পুত্রগণে বেষ্টিত হয়ে ত্রিগর্তরাজ সুশর্মা অর্জুনের অভিমুখে চললেন। পতঙ্গ যেমন অগ্নিতে দগ্ধ হয় সেইরূপ শতসহস্র যোদ্ধা অর্জুনের বাণে বিনষ্ট হলেন, তথাপি তাঁরা স’রে গেলেন না। রাজা শত্রুঞ্জয় এবং সুশর্মার ভ্রাতা সৌশ্রুতি নিহত হলেন। সুশর্মার আর এক ভ্রাতা সত্যসেন তোমরের আঘাতে কৃষ্ণের বাম বাহু বিদ্ধ করলেন, কৃষ্ণের হাত থেকে কশা ও রশ্মি প’ড়ে গেল। অর্জুন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে শানিত ভল্লের আঘাতে সত্যসেনের মস্তক ছেদন এবং শরাঘাতে তাঁর ভ্রাতা চিত্রসেনকে বধ করলেন। তার পর অর্জুন ইন্দ্রাস্ত্র প্রয়োগ করলেন, তা থেকে বহু সহস্র বাণ নির্গত হয়ে শত্রুবাহিনী ধ্বংস করতে লাগল। কৌরবপক্ষীয় প্রায় সকল সৈন্য যুদ্ধে বিমুখ হয়ে পালিয়ে গেল।

 রণভূমির অন্য দিকে যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন পরস্পরের প্রতি বাণবর্ষণ করছিলেন। যুধিষ্ঠির দুর্যোধনের চার অশ্ব ও সারথি বধ ক’রে তাঁর রথধ্বজ ধনু ও খড়্‌গ ভূপাতিত করলেন। দুর্যোধন বিপন্ন হয়ে রথ থেকে লাফিয়ে নামলেন, তখন কর্ণ অশ্বত্থামা কৃপ প্রভৃতি তাঁকে রক্ষা করতে এলেন, পাণ্ডবগণও যুধিষ্ঠিরের কাছে এসে তাঁকে বেষ্টন করলেন। দুই পক্ষে ভয়ংকর যুদ্ধ হ’তে লাগল, রণভূমিতে শতসহস্র কবন্ধ উত্থিত হ’ল। কর্ণ পাঞ্চালগণকে, ধনঞ্জয় ত্রিগর্তগণকে, এবং ভীমসেন কুরুসৈন্য ও সমস্ত হস্তিসৈন্য বধ করতে লাগলেন। দুর্যোধন পুনর্বার যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে যুদ্ধে রত হলেন এবং দুজনে বৃষের ন্যায় গর্জন ক’রে পরস্পরকে শরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করলেন। অবশেষে কলহের অন্ত করবার জন্য দুর্যোধন গদাহস্তে ধাবিত হলেন, যুধিষ্ঠির প্রজ্বলিত উল্কার ন্যায় দীপ্যমান একটি বৃহৎ শক্তি অস্ত্র দুর্যোধনের প্রতি নিক্ষেপ করলেন। সেই অস্ত্রে দুর্যোধনের মর্মস্থান বিদ্ধ হ’ল, তিনি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে গেলেন। ভীম নিজের প্রতিজ্ঞা স্মরণ ক’রে বললেন, মহারাজ, দুর্যোধন আপনার বধ্য নয়। তখন যুধিষ্ঠির যুদ্ধে নিবৃত্ত হলেন।

 কর্ণের সঙ্গে সাত্যকির যুদ্ধ হচ্ছিল। সায়ংকালে কৃষ্ণার্জুন যথাবিধি আহ্ণিককৃত্য ও শিবপূজা ক’রে কৌরবসৈন্যের দিকে এলেন। তখন দুর্যোধন অশ্বত্থামা কৃতবর্মা কর্ণ প্রভৃতির সঙ্গে অর্জুন সাত্যকি ও অন্যান্য পাণ্ডবপক্ষীয়