পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭২
মহাভারত

বীরগণের ঘোর যুদ্ধ হ’তে লাগল। অর্জুনের বাণবর্ষণে কৌরবসৈন্য বিধ্বস্ত হ’ল। কিছুকাল পরে সূর্য অস্তাচলে গেলেন, অন্ধকার ও ধূলিতে সমস্তই দৃষ্টির অগোচর হ’ল। রাত্রিযুদ্ধের ভয়ে কৌরবযোদ্ধগণ তাঁদের সেনা অপসারিত করলেন, বিজয়ী পাণ্ডবগণ হৃষ্টমনে শিবিরে ফিরে গেলেন। তার পর রুদ্রের ক্রীড়াভূমিতুল্য সেই ঘোর রণস্থলে রাক্ষস পিশাচ ও শ্বাপদগণ দলে দলে আসতে লাগল।

৭। কর্ণ-দুর্যোধন-শল্য-সংবাদ

 শত্রুর হস্তে পরাজিত প্রহৃত ও বিধ্বস্ত হয়ে কৌরবগণ ভগ্নদন্ত হতবিষ পদাহত সর্পের ন্যায় শিবিরে ফিরে এসে মন্ত্রণা করতে লাগলেন। কর্ণ হাতে হাত ঘ’ষে দুর্যোধনকে বললেন, মহারাজ, অর্জুন দৃঢ় দক্ষ ও ধৈর্যশালী, আবার কৃষ্ণ তাকে কালোপযোগী মন্ত্রণা দিয়ে থাকেন। আজ সে অতর্কিতে অস্ত্রপ্রয়োগ ক’রে আমাদের বঞ্চিত করেছে, কিন্তু কাল আমি তার সকল সংকল্প নষ্ট করব।

 পরদিন প্রভাতকালে কর্ণ দুর্যোধনকে বললেন, আজ আমি হয় অর্জুনকে বধ করব নতুবা তার হাতেই নিহত হব। আমি আর অর্জুন এপর্যন্ত নানা দিকে ব্যাপৃত ছিলাম, সেজন্য আমাদের যুদ্ধে মিলনই হয় নি। আমাদের পক্ষের প্রধান বীরগণ হত হয়েছেন, ইন্দ্রদত্ত শক্তি অস্ত্রও আর আমার নেই; তথাপি অস্ত্রবিদ্যায় শৌর্যে ও জ্ঞানে সব্যসাচী আমার সমকক্ষ নয়। যে ধনুর দ্বারা ইন্দ্র দৈত্যগণকে জয় করেছিলেন, ইন্দ্র যে ধনু পরশুরামকে দিয়েছিলেন, যার দ্বারা পরশুরাম একুশ বার পৃথিবী জয় করেছিলেন, যা পরশুরাম আমাকে দান করেছেন, বিজয়-নামক সেই ভয়ংকর দিব্য ধনু গাণ্ডীব ধনু অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। সেই ধনুর দ্বারা আমি যুদ্ধে অর্জুনকে বধ করব। কিন্তু যে যে বিষয়ে আমি অর্জুনের তুলনায় হীন তাও আমার অবশ্য বলা উচিত। অর্জুনের ধনুতে দিব্য জ্যা আছে, তার দুই অক্ষয় তূণীর আছে, আবার গোবিন্দ তার সারথি ও রক্ষক। তার অগ্নিদত্ত দিব্য অচ্ছেদ্য রথ আছে, তার অশ্বসকল মনের ন্যায় দ্রুতগামী, এবং রথধ্বজের উপর যে বানর আছে তাও ভয়ংকর। এইসকল বিষয়ে আমি অর্জুন অপেক্ষা হীন, তথাপি তার সঙ্গে আমি যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করি। শল্য কৃষ্ণের সমান, তিনি যদি আমার সারথি হন তবে নিশ্চয় তোমার বিজয়লাভ হবে। আরও, বহু শকট আমার বাণ ও নারাচ বহন করে চলুক, উত্তম অশ্বযুক্ত বহু রথ আমার পশ্চাতে থাকুক।