পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
২৩

সম্মান ও বরলাভের যোগ্য, কিন্তু যাতে তক্ষক শীঘ্র আসে আগে সেই চেষ্টা করুন। আগন্তুক ব্রাহ্মণকে রাজা বর দিতে চান দেখে সর্পসত্রের হোতা চণ্ডভার্গবও প্রীত হলেন না। তিনি বললেন, এই যজ্ঞে এখনও তক্ষক আসে নি। ঋত্বিগ্‌গণ বললেন, আমরা বুঝতে পারছি তক্ষক ভয় পেয়ে ইন্দ্রের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তখন রাজার অনুরোধে হোতৃগণ ইন্দ্রকে আহ্বান করলেন। ইন্দ্র বিমানে চ’ড়ে যজ্ঞস্থানে যাত্রা করলেন, তক্ষক তাঁর উত্তরীয়ে লুকিয়ে রইল। জনমেজয় ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, তক্ষক যদি ইন্দ্রের কাছে থাকে তবে ইন্দ্রের সঙ্গেই তাকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করুন।

 ইন্দ্র যজ্ঞস্থানের নিকটে এসে ভয় পেলেন এবং তক্ষককে ত্যাগ ক’রে পালিয়ে গেলেন। তক্ষক মন্ত্রপ্রভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে আকাশপথে যজ্ঞাগ্নির অভিমুখে আসতে লাগল। ঋত্বিগ্‌গণ বললেন, মহারাজ, ওই তক্ষক ঘুরতে ঘুরতে আাসছে, তার মহাগর্জন শোনা যাচ্ছে। আপনার কার্যসিদ্ধি হয়েছে, এখন ওই ব্রাহ্মণকে বর দিতে পারেন। রাজা আস্তীককে বললেন, বালক, তুমি সুপণ্ডিত, তোমার অভিপ্রেত বর চাও। আস্তীক তক্ষকের উদ্দেশে বললেন, তিষ্ঠ তিষ্ঠ তিষ্ঠ; তক্ষক আকাশে স্থির হয়ে রইল। তখন আম্ভীক রাজাকে বললেন, জনমেজয়, এই যজ্ঞ এখনই নিবৃত্ত হ’ক, অগ্নিতে আর যেন সর্প না পড়ে। জনমেজয় অপ্রীত হয়ে বললেন, ব্রাহ্মণ, সুবর্ণ রজত ধেনু যা চাও দেব, কিন্তু আমার যজ্ঞ যেন নিবৃত্ত না হয়। রাজা এইরূপে বার বার অনুরোধ করলেও আস্তীক বললেন, আমি আর কিছুই চাই না, আপনার যজ্ঞ নিবৃত্ত হ’ক, আমার মাতৃকুলের মঙ্গল হ’ক। তখন সদস্যগণ সকলে রাজাকে বললেন, এই ব্রাহ্মণকে বর দিন।

 আস্তীক তাঁর অভীষ্ট বর পেলেন, যজ্ঞ সমাপ্ত হ’ল, রাজাও প্রীতিলাভ ক’রে ব্রাহ্মণগণকে বহু অর্থ দান করলেন। তিনি আস্তীককে বললেন, তুমি আমার অশ্বমেধ যজ্ঞে সদস্যরূপে আাবার এসো। আস্তীক সম্মত হয়ে মাতুলালয়ে ফিরে গেলেন। সর্পগণ আনন্দিত হয়ে বর দিতে চাইলে আস্তীক বললেন, প্রসন্নচিত্ত ব্রাহ্মণ বা অন্য ব্যক্তি যদি রাত্রিতে বা দিবসে এই ধর্মাখ্যান পাঠ করে তবে তোমাদের কাছ থেকে তার যেন কোনও বিপদ না হয়। সর্পগণ প্রীত হয়ে বললে, ভাগিনেয়, আমরা তোমার কামনা পূর্ণ করব।

আস্তীকঃ সর্পসত্রে বঃ পন্নগান্ যোঽভ্যরক্ষত।
তং স্মরন্তং মহাভাগাঃ ন মাং হিংসিতুমহর্থ॥