পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭৪
মহাভারত

 তখন দুর্যোধন সসম্মানে শল্যকে ধ’রে সবিনয়ে মিষ্টবাক্যে বললেন, মদ্রেশ্বর শল্য, আপনি যা বললেন তা যথার্থ, কিন্তু আমার অভিপ্রায় শুনুন। কর্ণ বা অন্য কোনও রাজা আপনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নন, কৃষ্ণও আপনার বিক্রম সইতে পারবেন না। আপনি যুদ্ধে শত্রুদের শল্যস্বরূপ, সেজন্যই আপনার নাম শল্য। রাধেয় কর্ণ বা আমি আপনার অপেক্ষা বীর্যবান নই, তথাপি আপনাকে যুদ্ধে সারথি রূপে বরণ করছি; কারণ, আমি কর্ণকে অর্জুন অপেক্ষা অধিক মনে করি এবং লোকে আপনাকে বাসুদেব অপেক্ষা অধিক মনে করে। কৃষ্ণ যেরূপ অশ্বহৃদয় জানেন, আপনি তার দ্বিগুণ জানেন।

 শল্য বললেন, বীর দুর্যোধন, তুমি এই সৈন্যমধ্যে আমাকে দেবকীপুত্র কৃষ্ণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলছ সেজন্য আমি প্রীত হয়েছি। যশস্বী কর্ণ যখন অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন তখন আমি তাঁর সারথ্য করব, কিন্তু এই নিয়ম থাকবে যে আমি তাঁকে যা ইচ্ছা হয় তাই বলব[১]

 দুর্যোধন ও কর্ণ শল্যের কথা মেনে নিয়ে বললেন, তাই হবে।

৮। ত্রিপুরসংহার ও পরশুরামের কথা

 দুর্যোধন বললেন, মদ্ররাজ, মহর্ষি মার্কণ্ডেয় আমার পিতাকে দেবাসুরযুদ্ধের যে ইতিহাস বলেছিলেন তা শুনুন। দৈত্যগণ দেবগণের সহিত যুদ্ধে পরাজিত হ’লে তারকাসুরের তিন পুত্র তারাক্ষ কমলাক্ষ ও বিদ্যুন্মালী কঠোর তপস্যা ক’রে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে। ব্রহ্মা বর দিতে এলে তিন ভ্রাতা এই বর চাইলে, তারা যেন সর্বভূতের অবধ্য হয়। ব্রহ্মা বললেন, সকলেই অমরত্ব পেতে পারে না, তোমরা অন্য বর চাও। তখন তারকের পুত্রেরা বহু বার মন্ত্রণা ক’রে বললে, প্রপিতামহ, আমরা তিনটি কামগামী নগরে বাস করতে ইচ্ছা করি যেখানে সর্বপ্রকার অভীষ্ট বস্তু থাকবে, দের দানব যক্ষ রাক্ষস প্রভৃতি যা বিনষ্ট করতে পারবে না, এবং আভিচারিক ক্রিয়া, অস্ত্রশস্ত্র বা ব্রহ্মশাপেও যার হানি হবে না। আমরা এই তিন পুরে অবস্থান ক’রে জগতে বিচরণ করব। সহস্র বৎসর পরে আমরা তিন জনে মিলিত হব, তখন আমাদের ত্রিপুর এক হয়ে যাবে। ভগবান, সেই সময়ে যে দেবশ্রেষ্ঠ সম্মিলিত ত্রিপুরকে এক বাণে ভেদ করতে পারবেন তিনিই আমাদের মৃত্যুর কারণ হবেন। ব্রহ্মা ‘তাই হবে’ ব’লে প্রস্থান করলেন।

  1. উদ্‌যোগপর্ব ৩-পরিচ্ছেদে শল্য-যুধিষ্ঠিরের আলাপ দ্রষ্টব্য।