পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭৬
মহাভারত

বিন্ধ্য গিরি, সপ্তর্ষিমণ্ডল, গঙ্গা সরস্বতী ও সিন্ধু নদী, শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষ, রাত্রি ও দিন, প্রভৃতি দিয়ে রথের বিভিন্ন অংশ নির্মিত হ’ল। চন্দ্রসূর্য চক্র হলেন এবং ইন্দ্র বরুণ যম ও কুবের এই চার লোকপাল অশ্ব হলেন। কনকপর্বত সুমেরু রথের ধ্বজদণ্ড এবং তড়িদ্‌ভূষিত মেঘ পতাকা হ’ল। মহাদেব সংবৎসরকে ধনু এবং কালরাত্রিকে জ্যা করলেন। বিষ্ণু অগ্নি ও চন্দ্র মহাদেবের বাণ হলেন।

 খড়্‌গ বাণ ও শরাসন হাতে নিয়ে মহাদেব সহাস্যে দেবগণকে বললেন, সারথি কে হবেন? আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠতর তাঁকেই তোমরা সারথি কর। তখন দেবতারা ব্রহ্মাকে বললেন, প্রভু, আপনি ভিন্ন আমরা সারথি দেখছি না, আপনি সর্বগুণযুক্ত এবং দেবগণের শ্রেষ্ঠ, অতএব আপনিই মহাদেবের অশ্বচালনা করুন। লোকপূজিত ব্রহ্মা সম্মত হয়ে রথে উঠলেন, অশ্বসকল মস্তক নত ক’রে ভূমি স্পর্শ করলে। ব্রহ্মা অশ্বদের উঠিয়ে মহাদেবকে বললেন, আরোহণ করুন। মহাদেব রথে উঠে ইন্দ্রাদি দেবগণকে বললেন, তোমরা এমন কথা বলবে না যে দানবদের বধ করুন, কোনও প্রকার দুঃখও করবে না। তার পর তিনি সহাস্যে ব্রহ্মাকে বললেন, যেখানে দৈত্যরা আছে সেদিকে সাবধানে অশ্বচালনা করুন।

 ব্রহ্মা ত্রিপুরের অভিমুখে রথ নিয়ে চললেন। মহাদেবের ধ্বজাগ্রে স্থিত বৃষভ ভয়ংকর গর্জন ক’রে উঠল, সকল প্রাণী ভীত হ’ল, ত্রিভুবন কাঁপতে লাগল, বিবিধ ঘোর দুর্লক্ষণ দেখা গেল। সেই সময়ে বাণস্থিত বিষ্ণু অগ্নি ও চন্দ্র এবং রথারূঢ় ব্রহ্মা ও রুদ্রের ভারে এবং ধনুর বিক্ষোভে রথ ভূমিতে ব’সে গেল। নারায়ণ বাণ থেকে নির্গত হয়ে বৃষের রূপ ধারণ করে সেই মহারথ ভূমি থেকে তুললেন। তখন ভগবান রুদ্র বৃষরূপী নারায়ণের পৃষ্ঠে এক চরণ এবং অশ্বের পৃষ্ঠে অন্য চরণ রেখে দানবপুর নিরীক্ষণ করলেন, এবং অশ্বের স্তন ছেদন ও বৃষের খুর দ্বিধা বিভক্ত করলেন! সেই অবধি অশ্বজাতির স্তন লুপ্ত হ’ল এবং গোজাতির খুর বিভক্ত হ’ল। মহাদেব তাঁর ধনুতে জ্যারোপন এবং পাশুপত অস্ত্র যোগ ক’রে অপেক্ষা করছিলেন এমন সময়ে দানবদের তিন পুর একত্র মিলিত হ’ল। দেবগণ সিদ্ধগণ ও মহর্ষিগণ জয়ধ্বনি ক’রে উঠলেন, মহাদেব তাঁর দিব্য ধনু আকর্ষণ ক’রে ত্রিপুর লক্ষ্য ক’রে বাণ মোচন করলেন। তুমুল আর্তনাদ উঠল, ত্রিপুর আকাশ থেকে পড়তে লাগল এবং দানবগণের সহিত দগ্ধ হয়ে পশ্চিম সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হ’ল। মহেশ্বর তখন হা হা শব্দে তাঁর ক্রোধজনিত অগ্নিকে নির্বাপিত ক’রে বললেন, ত্রিলোক ভস্ম ক’রো না।