পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৭৭

 উপাখ্যান শেষ ক’রে দুর্যোধন শল্যকে বললেন, লোকস্রষ্টা পিতামহ ব্রহ্মা যেমন রুদ্রের সারথ্য করেছিলেন সেইরূপ আপনিও কর্ণের সারথ্য করুন। কর্ণ রুদ্রের তুল্য এবং আপনি ব্রহ্মার সমান। আপনার উপরেই কর্ণ ও আমরা নির্ভর করছি, আমাদের রাজ্য ও বিজয়লাভও আপনার অধীন। আর একটি ইতিহাস বলছি শুনুন, যা কোনও ধর্মজ্ঞ ব্রাহ্মণ আমার পিতাকে বলেছিলেন।—

 ভৃগুর বংশে জমদগ্নি নামে এক মহাতপা ঋষি জন্মেছিলেন, তাঁর একটি তেজস্বী গুণবান পুত্র ছিল যিনি রাম (পরশুরাম) নামে বিখ্যাত। এই পুত্রের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব বললেন, রাম, তুমি কি চাও তা আমি জানি। অপাত্র ও অসমর্থকে আমার অস্ত্রসকল দগ্ধ করে; তুমি যখন পবিত্র হবে তখন তোমাকে অস্ত্রদান করব। তার পর ভার্গব পরশরাম বহু বৎসর তপস্যা ইন্দ্রিয়দমন নিয়মপালন পূজা হোম প্রভৃতির দ্বারা মহাদেবের আরাধনা করলেন। মহাদেব বললেন, ভার্গব, তুমি জগতের হিত এবং আমার প্রীতির নিমিত্ত দেবগণের শত্রুদের বধ কর। পরশুরাম বললেন, দেবেশ, আমার কি শক্তি আছে? আমি অস্ত্রশিক্ষাহীন, আর দানবগণ সর্বাস্ত্রবিশারদ ও দুর্ধর্ষ। মহাদেব বললেন, তুমি আমার আজ্ঞায় যাও, সকল শত্রু জয় ক’রে তুমি সর্বগুণান্বিত হবে। পরশুরাম দৈত্যগণকে যুদ্ধে আহ্বান ক’রে বজ্রতুল্য অস্ত্রের প্রহারে তাদের বধ করলেন। যুদ্ধকালে পরশুরামের দেহে যে ক্ষত হয়েছিল মহাদেবের করস্পর্শে তা দূর হ’ল। মহাদেব তুষ্ট হয়ে বললেন, ভৃগুনন্দন, দানবদের অস্ত্রাঘাতে তোমার শরীরে যে পীড়া হয়েছিল তাতে তোমার মানব কর্ম শেষ হয়ে গেছে। তুমি আমার কাছ থেকে অভীষ্ট দিব্য অস্ত্রসমূহ নাও।

 তার পর মহাতপা পরশুরাম অভীষ্ট দিব্যাস্ত্র ও বর লাভ ক’রে মহাদেবের অনুমতি নিয়ে প্রস্থান করলেন। মহারাজ শল্য, পরশুরাম প্রীত হয়ে মহাত্মা কর্ণকে সমগ্র ধনুর্বেদ দান করেছিলেন। কর্ণের যদি পাপ থাকত তবে পরশুরাম তাঁকে দিব্যাস্ত্র দিতেন না। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না যে কর্ণ সূতকুলে জন্মেছেন; আমি মনে করি তিনি ক্ষত্রিয়কুলে উৎপন্ন দেবপুত্র, পরিচয়গোপনের নিমিত্ত পরিত্যক্ত হয়েছিলেন। সূতনারী কি ক’রে কবচকুণ্ডলধারী দীর্ঘবাহু সূর্যতুল্য মহারথের জননী হ’তে পারে? মৃগী কি ব্যাঘ্র প্রসব করে?